সম্পদ ও সম্মান মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি নেমে আসে এ অনুগ্রহ পরিমাণে কম হলেও অনেক উপকারি। তা হতে পারে সন্তান-সন্তুতি দিয়ে, সম্পদ দিয়ে, রিজিক দিয়ে, সম্মান দিয়ে কিংবা আমল ইত্যাদিতে। কিন্তু কী কাজ করলে মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি তার বরকত বা কল্যাণ দান করবেন?। হ্যাঁ, সম্পদ ও সম্মান বাড়ে পাঁচটি আমলে।
তা হলো- তওবা-ইসতেগফার করা, আল্লাহর জন্য দান করা, ওমরা করা, কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা, সকালবেলা কাজ শুরু করা। এ কাজগুলো মানুষের সম্মান ও সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। এ বিষয়গুলো কোরআন সুন্নায় সুন্দরভাবে ওঠে এসেছে।
১. তওবা-ইসতেগফার করা: যে যত বেশি তওবা-ইসতেগফার করবে; তার সামনে যত সংকটই (অভাব) থাকুক না কেন, মহান আল্লাহতায়ালা তা সমাধান করে দেবেন।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ দোয়া পড়বে- উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। আর আমি তার কাছে তওবা করছি।’ সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’ (রিয়াদুস সালেহিন ১৮৭৪, আবু দাউদ ১৫১৭, তিরমিজি ৩৫৭৭, মেশকাত ২৪০৪)
২. দান-সাদকা করা: আল্লাহর জন্য দান-সাদকা করতে হবে। দান-সাদকায় রিজিক প্রশস্ত হয়। মর্যাদা ও সম্মান বাড়ে। যারা আল্লাহর রাস্তায় দান-সাদকা করে, আল্লাহতায়ালা তাদের সীমাহীন রিজিক দান করে থাকেন। আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘বলুন, নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দার মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা: আয়াত ৩৯)
৩. ওমরাহ করা: ওমরা মানুষের গুনাহের কাফফারা। অভাব-অনটন দূর হয়ে যায়। এতে রিজিকে বরকত নেমে আসে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা এভাবে ওঠে এসেছে- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ওমরাহ করে; ওমরাহ তার গুনাহ, তার অভাব অনেক দূরে পাঠিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এক ওমরা থেকে অপর ওমরা পর্যন্ত মাঝের সময়ের (সব সগিরা গুনাহের) জন্য কাফফারাস্বরূপ। আর হজে মাবরূর; যে হজে কোনো পাপাচার সংঘটিত হয়নি, এর পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (মুসলিম) নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, তোমরা হজের পর ওমরা এবং ওমরার পর হজ করতে থাকো; কেননা ক্রমাগত হজ-ওমরা করতে থাকলে তা দারিদ্রতা ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে দেয়; যেমন হাপর লোহা ও সোনা-রুপা থেকে খাদ দূর করে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ)
সামর্থ্যবানদের ওপর হজ ও ওমরা করা আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হজ ও ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৬)
৪. কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা: যে কোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা বরকত ও সম্মানের বিষয়। মহান আল্লাহ বিসমিল্লাহ বলার বরকতে তার সম্পদ ও রিজিকে বরকত দেন। তাকে দান করে সীমাহীন সম্মান ও মর্যাদা। হাদিসে পাকে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন খাবার খায় আর যদি বিসমিল্লাহ বলে; তবে শয়তান ওই খাবারে অংশ নিতে পারে না। যেটুকু খাবার আছে তা (পরিমাণে কম হলেও) তার জন্য বরকত বয়ে আনে। অনুরূপভাবে কেউ যদি ঘরে প্রবেশ করার সময় বিসমিল্লাহ বলে তখনো শয়তান তার সঙ্গে বাসায় ঢুকতে পারে না। এভাবে বান্দা যখন সব কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে, তখন শয়তান সব কাজ থেকে মাহরুম হয়। আর আল্লাহ তাআলা সব কাজেই তাকে বরকত দান করেন।
৫. সকালবেলা কাজ শুরু করা: দিনের শুরুতে কাজ শুরু করা। যদি কারো অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য একটু বেলা করে হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং নিজ ঘরের কাজ দিয়ে হলেও সকাল সকাল কাজ শুরু করা। কেননা সকালবেলার কাজে আল্লাহ তাআলা বরকত দান করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছেন-
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লিউম্মাতি ফি বুকুরিহা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে সকালবেলা বরকত দান করবেন।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য সকালবেলার সময়টাতে বরকত দেয়া হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি সকালের সময়টিতে ঘুমিয়ে থাকে তবে কীভাবে বরকত আসবে। এ কারণেই দিনের শুরুতে মহান আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করার মাধ্যমে বরকত ও কল্যাণ কামনা জরুরি। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সম্পদ ও সম্মান পেতে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।