বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
বাংলাবাজার পত্রিকা.কম যে ১১ পেশায় যুক্ত হতে পারবেন না এমপিও শিক্ষকরা বাংলাবাজার পত্রিকা.কম প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ছাড়াল ৪ লাখ ৫৬ হাজার বাংলাবাজার পত্রিকা.কম বিজয় দিবসে ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্পে রাজাকারের পাঠ’ নাটকে জামায়াত নেতাদের বাধা বাংলাবাজার পত্রিকা.কম বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানিতে বড় বাধা দালাল চক্র: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাবাজার পত্রিকা.কম অস্ট্রেলিয়ার ঘটনাকে ‘চরম ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা তুলসী গ্যাবার্ডের বাংলাবাজার পত্রিকা.কম হঠাৎ ঢাকার ভারতীয় ভিসা সেন্টার বন্ধ ঘোষণা বাংলাবাজার পত্রিকা.কম শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘোষণা, তেজগাঁও কলেজের সামনে পুলিশ মোতায়েন বাংলাবাজার পত্রিকা.কম সোহেল রানা-হুমায়ূন ফরীদি-জসীমসহ যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখেছিলেন বাংলাবাজার পত্রিকা.কম স্নাতক পাসে নিয়োগ দেবে প্রাইম ব্যাংক, থাকছে না বয়সসীমা বাংলাবাজার পত্রিকা.কম কম পরিশ্রমে ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়

শবে কদর: ফজিলত, গুরুত্ব ও করণীয়

শবে কদর: ফজিলত, গুরুত্ব ও করণীয়

শবে কদর আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো ‘সম্মানিত রাত’ বা ‘গুরুত্বপূর্ণ রাত’। ইসলাম ধর্মে এটি অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত রাত হিসেবে বিবেচিত হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, এই রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে এবং এটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। শবে কদর রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে, বিশেষত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতে এটি হতে পারে।

শবে কদরের গুরুত্ব বোঝাতে আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণ একটি সূরা নাজিল করেছেন, যা হলো সূরা আল-কদর। এই সূরায় বলা হয়েছে, কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম, এই রাতে ফেরেশতারা অবতরণ করেন এবং এটি শান্তিতে পরিপূর্ণ থাকে ফজরের উদয় পর্যন্ত। এ থেকে বোঝা যায়, শবে কদরের রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমতুল্য হয়ে যায়।

শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

গুনাহ মাফ হয়: "যে ব্যক্তি ঈমান ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শবে কদরে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।" (সহিহ বুখারি)

ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন: এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতা দুনিয়ায় নেমে আসেন এবং তারা মুমিনদের জন্য শান্তি ও কল্যাণের দোয়া করতে থাকেন।

কুরআন নাজিলের রাত: শবে কদরের অন্যতম মহিমা হলো, এই রাতে সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল-কুরআন নাজিল হয়।

শবে কদর নির্দিষ্ট কোনো রাত তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। তবে রাসুল (সা.) বলেছেন— "তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে শবে কদর তালাশ করো।" (সহিহ বুখারি) সুতরাং শবে কদর পাওয়ার জন্য আমাদের উচিত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতে বেশি বেশি ইবাদতে মশগুল হওয়া।

শবে কদর নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার

এ মহিমান্বিত রাতে সিন্নি পাকানো, ফটকা ফুটানো, মাজারে মাজারে ঘোরা, হালুয়া-রুটি নিয়ে ব্যস্ত হওয়া, পাল্টু গল্প করা, মোবাইল-সামাজিক মাধ্যমে অযথা সময় নষ্ট করা, আকাশ থেকে আলোর নেমে আসার আকিদা রাখা, গাছ সিজদা করবে এমন ধারণা রাখা, অতিরিক্ত আলো প্রজ্বলন করা ইত্যাদি শবে কদরের মূল ফজিলত নয়।

শবে কদরের মূল ফজিলত হলো আল্লাহর ইবাদত করা এবং গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য তাঁর দরবারে কান্নাকাটি করা। সুতরাং, সময় নষ্ট না করে এই রাতকে পূর্ণভাবে ইবাদতের মাধ্যমে কাজে লাগানো উচিত।


শুধুমাত্র ২৭ রমজানেই শবে কদর হয়—এ ধারণা সঠিক নয়। যদিও ২৭ রমজান শবে কদর হওয়ার সম্ভাব্য রাতগুলোর মধ্যে একটি, তবে এটি নিশ্চিত নয়।


শবে কদরের ইবাদত কী?

শবে কদরের রাতটি ইবাদতে কাটানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই রাতে নিম্নলিখিত ইবাদত করা যেতে পারে—

নফল নামাজ: বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উচিত। দুই রাকাত, চার রাকাত বা আট রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে।


কুরআন তিলাওয়াত: শবে কদরের রাতে বেশি বেশি কুরআন পড়া উত্তম।

তাসবিহ ও জিকির: যেমন,

সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ


দোয়া ও ইস্তিগফার: রাসুলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন, শবে কদরে এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়তে— "হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।" (তিরমিজি)

সালাতুত তাসবিহ: অনেকে শবে কদরের রাতে সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায় করেন, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।

গরিব-দুঃখীদের সাহায্য: দান-সদকা করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। শবে কদরের রাতে এটি করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।

শবে কদর হলো এক মহিমান্বিত রাত, যা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সুযোগ হতে পারে। এই রাতকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হলে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটানো উচিত। অযথা কুসংস্কারে না গিয়ে কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী এই রাতের ফজিলত ও গুরুত্ব অনুধাবন করে আমল করাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে কদরের ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ