বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪

শিলপাটায় সাবলম্বী সাইদুর

শিলপাটায় সাবলম্বী সাইদুর

গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য শিলপাটা।যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শহরাঞ্চগুলোতে এই প্রাচীন ঐতিহ্যটি হারিয়ে যেতে বসেছে অনেকাংশে। গ্রাম-বাংলার সেই ঐতিহ্য ধরে রেখে সাবলম্বী হয়েছেন সাইদুর মিয়া। শিলপাটা তৈরি ও বিক্রির আয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে তার পরিবার।

রংপুর শহরের পার্ক মোড়ে ছোট জায়গায় কারখানা দিয়ে একযুগেরও বেশি সময় ধরে শিলপাটা তৈরি করছেন সাইদুর রহমান। এসব শিলপাটা রংপুরসহ আশেপাশের জেলাগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা ভালো থাকায় শিলপাটা তৈরিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তিনি। সেই সাথে শিলপাটা তৈরির প্রাচীন ঐতিহ্যকেও ধরে রেখেছেন।

কারখানায় দেখা গেছে, শ্রমিকরা বালু সিমেন্ট গুলিয়ে ফার্মার মাধ্যমে শিলপাটা তৈরি করে শুকাতে দিচ্ছে। শুকানো শিলপাটা পরিষ্কার করে বিক্রির জন্য জমা করে রাখা হচ্ছে। 

কারখানার শ্রমিক হারুন অর রশিদ জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে শিলপাটা বানানোর কাজ করছি। অনেক জায়গায় পাথর কেটে বানানো হলেও এখানে বালু আর সিমেন্ট দিয়ে শিলপাটা বানানো হয়। শিলপাটা বানানোর পর বিক্রির উপযোগী করতে আট থেকে ১০ দিন সময় লাগে। এরপর চাহিদা অনুযায়ী গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ও শহরেও বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

শিলপাটা কারখানাটির মালিক সাইদুর রহমান বলেন, প্রায় চৌদ্দ বছর আগে রিক্সা চালাইতাম। বিভিন্ন জায়গায় শিলপাটা বানানো দেখে এখানে শিলপাটা বানানো শুরু করি। শুরুর দিকে বানানো বিক্রি সব নিজ হাতেই করতাম। এখন চাহিদা বেশি হওয়ায় কর্মচারি রেখে শিলপাটা বানাই। বানানো শিলপাটা রংপুরের শহর, গ্রামের বাইরে এখন লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়েও বিক্রি হয়। এছাড়া অনেকে কারখানায় এসে অর্ডার করে বানিয়ে নেয়। এসব শিলপাটা মানভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মশলা বাটার জন্য ব্লান্ডারসহ বিভিন্ন সহজ মাধ্যম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে অনেকেই আবারো শিলপাটা ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন। এর কারণ হচ্ছে শিলপাটা দিয়ে মশলা বেটে দিলে তরকারির স্বাদ বেশি হয়। এছাড়া উত্তরের চর ও নদী এলাকার মানুষগুলো শিলপাটায় বাটা মসলা ছাড়া খেতে পারেন না। এই অঞ্চলে শিলপাটার চাহিদা বেশি।

তিনি জানান, শিলপাটা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গ্রাম-গঞ্জে বিভিন্ন ফসলের মৌসুমে। ধান, আলু, তামাক, পাট মৌসুমে ভালো বিক্রি হয়। কিছুদিন পর কৃষকের ঘরে ধান উঠবে তখন বেশি বিক্রি হবে। তাই এখন বেশি করে শিলপাটা তৈরি করে রাখছি।

শিলপাটার ব্যবসায় লাভ কেমন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন বিক্রি বেশি হয় তখন মোটামুটি লাভ হয়। এক মৌসুমে একলাখ টাকা ব্যয় করলে লাভ হয় আড়াই লাখ টাকার উপরে। নিজ পরিবারের খরচ চালানোর পাশাপাশি কিছু জমিজমাও কিনেছেন বলে জানান তিনি।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন