পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ থামাতে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর জিও নিউজের।
হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই তারা থামুক। আমরা দুই দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক বজায় রাখি। তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, তাই আমি চাই সংঘর্ষ বন্ধ হোক। আর যদি আমি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমি সেখানে থাকব।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ও উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, ভারত যদি আর কোনো সামরিক আগ্রাসন না চালায় এবং পেহেলগাম হামলার একটি স্বাধীন তদন্তে সম্মত হয়, তাহলে পাকিস্তানও উত্তেজনা বাড়াতে কোনো অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেবে না।
মার্কিন গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেন, পাকিস্তান চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে, তাহলে আমরা তা স্বাগত জানাব।
তিনি আরও জানান, সর্বশেষ উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান বিমানবাহিনী পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং দুটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
পাকিস্তান বরাবরই ভারতের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলাকে কেন্দ্র করে চালানো আগ্রাসনকে অযৌক্তিক এবং উস্কানিমূলক বলে দাবি করে আসছে। ইসলামাবাদের দাবি, ভারত এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে এবং সরাসরি পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালাচ্ছে।
দুই দেশের চলমান হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন অন্য বিশ্বনেতারাও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শন করতে এবং দ্রুত কূটনৈতিক পথ খুঁজে বের করার জন্য সরাসরি সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘উভয় দেশের সঙ্গেই যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ এবং অনন্য সম্পর্ক রয়েছে। আমি ভারত ও পাকিস্তানে আমার প্রতিপক্ষদের কাছে স্পষ্ট করে বলেছি যে যদি এটি আরও তীব্র হয়, তাহলে কেউ জিতবে না।’
এ হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বিশ্বসংস্থাটির মহাসচিবের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তার একজন মুখপাত্র বলেছেন, নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযান নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
ইউরোপের দেশ ফ্রান্স দুই দেশকে সংযম প্রদর্শন করতে বলেছে। টিএফওয়ান টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারট বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহতা থেকে ভারতের আত্মরক্ষার আকাঙ্ক্ষা আমরা বুঝতে পারছি। তবে আমরা স্পষ্টতই ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই, যেন উত্তেজনা বৃদ্ধি না পায় এবং অতি অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপপ্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ভারত এবং পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা কমানো এবং উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক দ্বন্দ্ব নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান তিনি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে বলা হয়েছে।
ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুভেন আজার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইসরায়েল ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে।’