শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫

আরেক সাবেক এমপির কাছ থেকে ৫ কোটি টাকার চেক নেন রিয়াদ

আরেক সাবেক এমপির কাছ থেকে ৫ কোটি টাকার চেক নেন রিয়াদ

ঢাকার গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের পরিবারের কাছ থেকে চাঁদাবাজির মাসখানেক আগেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজন আরও এক এমপির কাছ থেকে চাঁদা নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাস খানেক আগে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুল কালাম আজাদের অফিসে হামলা চালিয়ে নগদ টাকা না থাকায় জোর করে ড্রয়ার থেকে চেক বই বের করে ৫ কোটি টাকার চেক লিখে নিয়ে যায় রিয়াদ। 

রাজধানীর গ্রিন রোডে রংপুর-৬ আসনের সাবেক সদস্য সদস্য আবুল কালাম আজাদের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করে নগদ টাকা না পেয়ে ১১টি চেকে ৫ কোটি টাকা লিখে নিয়ে যায়।

সাবেক সংসদ সদস্যের ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও শ্যালক সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

সাইফুল ইসলাম জানান, গত ২৬ জুন বিকেল ৫টার দিকে গ্রিন রোডে সাবেক সংসদ সদস্যের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সমন্বয়ক পরিচয়ে রিয়াদের নেতৃত্বে ৬ জন প্রবেশ করে। সে সময় অফিসে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ। অফিসে এসেই তারা এমপির ফোন কেড়ে নেয়। পরে আওয়ামী লীগের দোসর বলে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। অফিসের নিচে ২০০ লোক আছে। এসব বলে হুমকি দিয়ে তারা মব তৈরি করে। এ সময় তারা তার কাছে টাকা দাবি করে। কিন্তু নগদ টাকা না থাকায় জোর করে ড্রয়ার থেকে চেক বই বের করে। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক বইয়ের ১১টি পাতায় ৫ কোটি টাকা লিখিয়ে নিয়ে চলে যায়। এসময় তার ফোনটা দিয়ে যায়।

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেকের টাকা ক্যাশ করতে পারেননি। দ্রুতই এ ঘটনায় মামলা করবেন বলে আর কিছু বলতে চাননি সাইফুল ইসলাম।


এর মধ্যে রিয়াদের বাসা থেকে ৪টি চেক উদ্ধার করেছে গুলশান থানা-পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, রিয়াদের বাসা থেকে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। কারো দলীয় পরিচয় মূখ্য বিষয় না। সম্ভাব্য কারণ ও আর কেউ জড়িত আছে কি না সেটা তদন্ত শেষে জানা যাবে।



চেক উদ্ধারের ঘটনায় মামলার বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের নিউমার্কেট (নিউমার্কেট-কলাবাগান) জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জোর করে চেক নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী সাবেক সংসদ সদস্যের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।এদিকে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু সাবেক এমপির বাসাতেই নয়, গুলশান, বনানী, বাড্ডা এলাকায় অনেকের কাছ থেকেই তারা চাঁদা দাবি করেছে। তাদের ৮ থেকে ১০ জনের একটি গ্রুপ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে। অনেকে মৌখিকভাবে অভিযোগও করেছে। সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


শুলশান থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান বলেন, মামলার তদন্ত চলেছে। সেসব তথ্য পাচ্ছি সেগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যার পর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের ওই বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার পর আরও ৪০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন পাঁচজন।


তারা হলেন-মো. সাকাদাউন সিয়াম (২২), নাটোরের লালপুরের বাসিন্দা সাদমান সাদাব (২১), মো. আমিনুল ইসলাম (১৩), ইব্রাহীম হোসেন (২৪) এবং আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ (২৫)।

 

তাদের মধ্যে রিয়াদ নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা এবং ধানমন্ডির নিউ মডেল এলাকায় বসবাস করেন। এছাড়া ইব্রাহীমের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের রামদাসদী গ্রামে এবং আমিনুল বাড্ডা আলাতুন্নেছো স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র।

 

ইব্রাহীম হোসেন মুন্না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক। মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব সদস্য।


পরে রাতেই চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তিনজনকে বহিষ্কার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় চারজনকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

 

২৭ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 


৭ দিনের রিমান্ড পাওয়া আসামিরা হলেন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ এবং সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার বহিষ্কৃত আহ্বায়ক মো. ইব্রাহিম হোসেন, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব।

 

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় আসামি বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদ ও অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদের বাসায় যান। তখন তারা হুমকি ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ আখ্যায়িত করে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকি দেন এবং টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকেন তারা।


এক পর্যায়ে সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ ৫ লাখ টাকা ও ভাইয়ের কাছে থেকে নিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা দেন।


এর পর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার ফ্ল্যাটের দরজায় সজোরে ধাক্কা মারেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মুঠোফোনে অবহিত করলে আসামিরা চলে যায়।


২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় আবার রিয়াদের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা বাদীর বাসার সামনে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন। বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানান। তখন আসামিদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন।


পরবর্তীতে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে তাৎক্ষণিক গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করে। এ সময় অন্য আসামি অপু পালিয়ে যান।

 

এদিকে চাঁদাবাজির ঘটনায় নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতিত সারাদেশে সব কমিটি স্থগিত করা হয়।


সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ