ধারাবাহিক ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর জনপ্রিয় জুটি এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। পর্দায় প্রেম, বাস্তবে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তাদের। মাত্র এক মাসেই টেলিভিশনে জুটি হয়ে এসে বাজিমাত করেছেন জীতু কমল ও দিতিপ্রিয়া রায়। এ জুটির রসায়নে মুগ্ধ দর্শক। কিন্তু পর্দার প্রেমের সেই মিষ্টি রসায়ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে কটাক্ষ, অভিযোগ আর হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশটের যুদ্ধে!
ঘটনার শুরু ৪ আগস্ট, সোমবার রাতে। সমাজমাধ্যমে বিস্ফোরক পোস্ট করেন অভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া রায়। তার দাবি, সহ-অভিনেতা জীতু কমল নাকি নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন তার সঙ্গে। সেই বার্তায় কিছু আপত্তিকর বক্তব্য রয়েছে, যা কোনো মেয়ের পক্ষে অসম্মানজনক।
এই পোস্ট রাতারাতি ভাইরাল। সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় তীব্র আলোচনা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুখ খুলেছেন জীতু কমলও। ‘আর্য সিংহ রায়’ খ্যাত এই ছোট পর্দার অভিনেতা নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে দু’জনের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি যদি স্ক্রিনশটগুলো না দিতাম, তাহলে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতাম?’
তার বক্তব্য, তিনি অপেক্ষা করছিলেন দিতিপ্রিয়া হয়তো পোস্ট মুছে ফেলবেন। কিন্তু সেটা না করে অভিনেত্রী বারবার মন্তব্য করে চলেছেন। তার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে সব স্ক্রিনশট প্রকাশ করে তিনি নিজের পক্ষ নিলেন।
স্ক্রিনশটের পাশাপাশি প্রতিটি পোস্টের আগে জীতুর ‘ওঁ’ বা ‘নমঃ শিবায়’ লেখা নিয়েও সমালোচকদের কটাক্ষ। কেউ কেউ বলছেন, ‘ভয় পাচ্ছেন বলেই কি এত ঈশ্বরভক্তি?’ তবে অভিনেতার সোজাসাপটা জবাব, ‘ভগবানে মানুষ কি শুধু ভয় পেলে স্মরণ করে? আমার শিব আমার বন্ধু। দুঃখ-সুখে সব ভাগ করে নিই। রক্ষা পেতে নয়, আত্মবিশ্বাসে ভর করেই স্মরণ করি।’
স্ক্রিনশট ফাঁস করার পর আরও চটেছেন দিতিপ্রিয়া। তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘আমি শেষ পর্যন্ত সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম ব্যক্তিগত স্তরেই যাতে থাকে ব্যাপারটা। কিন্তু আমাদের কথোপকথন এভাবে প্রকাশ্যে আসার পর তো আর কিছু বাকি থাকে না। তবে উনি যে স্ক্রিনশটটা ভাগ করেছেন তাতে স্পষ্ট যে আমি কোনো মিথ্যাচার করিনি। মজার ছলে কেউ কাউকে ‘প্রেগন্যান্ট’ কিনা প্রশ্ন করতে পারে! আর তো আমার কোনো বাধা রইল না। আমিও সবটাই প্রকাশ্যে বলতে পারি।’
এ প্রসঙ্গে জীতুর বক্তব্য, তিনি কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছেন, দিতিপ্রিয় অন্তঃসত্ত্বা কি না। কোনো অন্য উদ্দেশ্য ছিল না। সেই প্রশ্ন সম্বলিত চ্যাটের প্রতিলিপি সমাজমাধ্যমে তুলে ধরেছেন জীতু। অভিনেতার দাবি, তিনি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হচ্ছেন। তার ভাষ্য, ‘ভিকটিম কার্ড খেলাটা আমাদের সমাজে প্রথম নয়। অনেক উদাহরণ আছে। কিন্তু এই মেয়েটির কোনও দোষ নেই, এই মেয়েটি নিরপরাধ। এই মেয়েটিকে পেছন থেকে প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। যারা দিচ্ছেন তারা কিন্তু বিপদের সময় পাশে দাঁড়াবেন না।’
তবে শুধু এটুকুই নয়, যে অভিযোগ, পাল্টা-অভিযোগের ক্ষেত্র চলছে তার বিরুদ্ধেও সুর চ়ড়িয়েছেন জীতু। তিনি ইনস্টাগ্রামে লেখেন, ‘নিজেও হয়তো জানে না, যা করেছে সেটা কতটা গভীর। রাখাল যে দিন সত্যি মানুষখেকো বাঘের মুখে পড়বে সে দিন কেউ সেটা বিশ্বাস করবে না। তবুও ছোট তো, একটু স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে মার্জনা করবেন।’
জীতু টেনে এনেছেন দিতিপ্রিয়ার ব্যক্তিগত জীবনও। তার ‘রিয়েল লাইফ’ প্রেমিকের কথাও সমাজমাধ্যমে তুলেছেন অভিনেতা। তিনি লেখেন, “একটু অপরিণত, আর নিজের প্রেমিকের জন্য জীবনটুকু পর্যন্ত দিতে পারে। আর প্রেমিক মহাশয়কে বলছি, এঁকে যত্ন করে রাখবেন। প্লিজ হাতছাড়া করবেন না, আপনি রত্ন পেয়েছেন।’
অনলাইনে তর্ক-স্ক্রিনশট লড়াই চললেও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই সরাসরি মামলা বা আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটেননি। তবে এই যুদ্ধ ছোট পর্দার জনপ্রিয় দুই তারকার সম্পর্ককে স্থায়ীভাবে বদলে দেবে বলেই মনে করছেন অনেকে। প্রভাব পড়তে পারে তাদের অভিনীত নাটকেও।
শোনা যাচ্ছে, এরই মধ্যে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এবং প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে মিটিংও হয়েছে। এই সমস্যা চলতে থাকলে অভিনেত্রী ধারাবাহিক ছাড়তেও নাকি রাজি। তিনি নিজের ‘ এনওসি’ তৈরি করে রেখেছেন। সূত্র বলছে, প্রযোজনা সংস্থার তরফে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ধারাবাহিকটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।