রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামুনশিকড় গ্রামে ঋণ ও অভাবের কারণে চারজনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন এক দম্পতি, তাঁদের বড় ছেলে ও ছোট মেয়ে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঘটনা জনসমক্ষে আসে এবং দুপুরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, পরিবারটির পিতা সিলিং ফ্যানে ঝুলেছিলেন। পাশে বিছানায় পড়ে ছিলেন বড় ছেলে, আর পাশের ঘরের বিছানায় স্ত্রী ও ছোট মেয়ে। সবাইকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশে পাওয়া একটি চিরকুটে লেখা ছিল, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।”
চিরকুটে যা লেখা ছিল-
দুই পৃষ্ঠার চিরকুটের ওপর লেখা ছিল, ‘আমরা চারজন পৃথিবী থেকে বিদায় নেব, আর দেখা হবে না খোদা হাফেজ।’ এরপর লেখা ছিল, ‘আমি মিনারুল। নিচে যেসব লেখা লিখব, সব আমার নিজের কথা, এই কারণে লিখে যাচ্ছি, কারণ, আজ রাতে আমরা চারজন মারা যাব। এই মরার জন্য কারও কোনো দোষ নেই। কারণ লিখে না গেলে পুলিশ কাকে না কাকে ফাঁসিয়ে টাকা খাবে। আমি মিনারুল প্রথমে আমার বউকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিনকে মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে মেরেছি। তারপর আমি গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি। আমাদের চারজনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার বউ-বাচ্চা না দেখে এবং বড় ছেলে যেন জানাজায় না যায়। আমাদের চারজনকে কাফন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা যেন টাকা না দেয়। এটা আমার কসম। (ইতি মিনারুল, আসসালামু আলাইকুম)।’
আরেক পৃষ্ঠায় লেখা ছিল, ‘আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম এই কারণে যে আমি একা যদি মরে যাই, তাহলে আমার বউ, ছেলেমেয়ে কার আশায় বেঁচে থাকবে। কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া দিতেই পারব না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম, সেই ভালো হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্য কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য অনেক লোকের কাছে ছোট হয়েছে। আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই, সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।’