সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

নির্বাচন বর্জনের ডাক বিএনপির

নির্বাচন বর্জনের ডাক বিএনপির

এক দফা দাবিতে ‘একতরফা’ নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে দেশবাসীকে আগামী রোববার ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ‘সর্বজনীন ভোট বর্জনের’ ডাক দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার সকালে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। ‘সর্বজনীন ভোট বর্জনের মাধ্যমে চলমান আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও অংশগ্রহণ একদলীয় শাসনের কবল থেকে বাংলাদেশের মানুষ শিগগির মুক্তি পাবে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’ এদিকে ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জনে শনিবার (৬ জানুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।

মঈন খান বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, এ একদলীয় বাকশালী সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। তাই তাদের অন্যায় ও অবৈধ হুমকিকে পরোয়ার করার কোনো কারণ নেই।’

তিনি বলেন, আমরা আজকে গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি এ আহ্বান জানাবো, আপনারা এ জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকারের কোনো হুমকি-ধামকি অথবা ভয়ভীতিতে চিন্তিত হবেন না। সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করুন, যারা ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধ্য করতে চায় তাদের চিহ্নিত করুন।

আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই, ভাতা কার্ড জব্দ করে কিংবা ভাতা বন্ধ করে দিয়ে বা জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত হবেন বা হচ্ছেন ভবিষ্যতে তাদের আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট কারচুপি করতে সরকার ও সরকারির দলের বিভিন্ন নীলনকশার পরিকল্পনা ছাত্রলীগ ও যুব লীগের কর্মীরা লাগামহীন জ্বাল ভোট দেওয়া, ভোটার সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো, মৃত ও প্রবাসী ব্যক্তির নামে ভুয়া ভোট দেয়া প্রভৃতি বিষয়গুলো তুলে ধরেন মঈন খান।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, আজ থেকে অল্পকয়েক মাস আগে এক উপনির্বাচনে ৫৩ সেকেন্ডে ৪৭ টি ভুয়া ভোটের সিল মারা হযেছিল। আমরা কী বলবো এটা গিনেস বুকে রেকর্ড করা উচিত। সেই ধারা ৭ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনে ঘটাতে যাচ্ছে …সেটা আমাদের কারো বলার অপেক্ষা রাখে না।

গুলশানে নিজের বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। যেখানে মঈন খানের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।

বিশ্বের মিডিয়া ও বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ আজকে বাংলাদেশের কোনো চিত্রে দেখছে, সেটা কিন্তু তারা এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে। এখানে কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই। একজন মানুষের ইচ্ছায় আজকে দেশের ১২ কোটি ভোটারের ইচ্ছা নির্ধারিত হবে… এটা কোনোদিন হতে পারে না।

‘সরকার ভাবছে ৭ জানুয়ারি তাদের জয়লাভের দিন। আমি বলবো, ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের পরাজয়ের দিন। কারণ সেদিন তারা বাংলাদেশের নতুন করে অপমৃত্যু ঘটাবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের আন্দোলনকে বিপথগামী করার জন্য, বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য সরকার নিজেই বেশ কিছু ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে। এখনো সেই অপচেষ্টা চলছে। আপনারা ক’দিন আগে দেখেছেন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো হাসপাতালগুলোতে একটা নির্দিষ্ট দিনে রেডি রাখার জন্য যাতে তারা চিকিৎসা করতে পারে। ঠিক ওইদিন একেবারে ঢাকা মহানগরীর ভেতরে বেশকিছু গাড়িতে আগুন ধরে গেলো এবং বেশ কিছু লোক মারা গেলো।

তিনি বলেন, তারা নির্বাচন করছে, বিরোধীদল এ নির্বাচনে নেই। এরপরও কয়েকজন মানুষ মারা গেলো, অনেক মানুষ আহত হলো, অনেক জায়গায় অগ্নিসংযোগ হয়েছে, বাড়িঘর আক্রমণ হয়েছে সেটা কে বলবে?

আবদুল মঈন খান বলেন, ভোট তো মনোনয়নপত্র দাখিরের দিন ৩০ নভেম্বর হয়ে গেছে। সরকার প্রকাশ্যে অত্যন্ত লজ্জা ও কলঙ্কের বিষয়… মানুষ ভোট চুরি করে, ভোট গোপনে.. আর আজকে ভোটচুরি হয় প্রকাশ্যে…এর চেয়ে বড় লজ্জার কথা তো হতে পারে না। প্রকাশ্যে আজকে ৫ তারিখে … যে কোনো লোককে জিজ্ঞাসা করুন তারা বলে দেবে কোন আসনে কে জিতবে।

কিসের ৭ তারিখ ভোট? ৭ তারিখে একটা ঘোষণা হতে পারে… নির্বাচন তো হয়েই গেছে। সরকার এখন ভাঁওতাবাজি, ধাপ্পাবাজি, ভুয়া নাটক ও তামাশা করছে। সেই কারণেই আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করেছি। এটা ইলেকশন না সিলেকশন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ওবায়দুল কাদের খেলার কথা। বিএনপি রাজনীতিকে খেলা বলেই মনে করে না। বিএনপি মনে করে রাজনীতি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়… এটা খেলার বিষয় না। আমরা এ খেলায় অংশ নেইনি, এ খেলায় অংশ নিতে রাজি না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, দেখুন হরতাল মানে কি? আমাদের প্রতিবাদ। আমাদের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে যতখানি সম্ভব তারা করবে।

আজকেও খবরে কাগজে এসেছে, সহিংসতায় দুইজন মারা গেছেন… এটা প্রতিদিন ঘটেছে। এখন ওদের (সরকার) একটাই লক্ষ্য আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর দায় চাপানো। আমরা সেটা হতে দেবো না। আমরা জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছি, আপনারা হরতাল পালন করুন, এ নির্বাচন বর্জন করুন। সেজন্য আমাদের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবে। উদ্দেশ্যে আমাদের প্রতিবাদটা জাতির কাছে জানালাম, বিশ্বের কাছে জানালাম এবং জাতিও আজকে এর প্রতিবাদ করছে।’

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন