রবিবার, ৫ মে, ২০২৪

হুমকি ধামকিতে হচ্ছে না কাজ, বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম

হুমকি ধামকিতে হচ্ছে না কাজ, বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম

❏ চাল তেল মাংস সবজিসহ সব পণ্যেই ঊর্ধ্বগতি

নিত্যপণ্যের বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীসহ ভোক্তা অধিদপ্তরের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও অভিযানের পরেও বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল তেল মাংস সবজিসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের বাজারেই ঊর্ধ্বগতি। এ সময় শীতের সবজিতে ভরপুর বাজার, তারপরও কমছে না দাম। কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর আবারও বেড়েছে মুরগির ডিমের দাম। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস চরমে।

অথচ ভোটের আগে যে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজিতে নেমেছিল, তা এখন ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আটা-ময়দা ও ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা ও তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেড়েছে গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, আটা, ময়দা, ডাল, ছোলা, আদা ও রসুনসহ আরও বেশ কিছুর দাম। শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

মাত্র একদিন আগেই বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, বেশি মুনাফার লোভে অন্যায়ভাবে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীলের চেষ্টা যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোহাম্মদপুরে টিসিবি আয়োজিত দেশব্যাপী এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে জানুয়ারি মাসের পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

তার আগেরদিন খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘ভরা মৌসুমে আমন চালের দাম বাড়বে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়িয়েছেন, এখন সেভাবেই কমাতে হবে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অবৈধ মজুদকারী কিংবা অহেতুক দাম বাড়িয়ে দেয়া ব্যবসায়ী কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। বিনা লাইসেন্সে যারা ধানের স্টক করছেন তারা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না।

মন্ত্রীদের হুমকি-ধামকির পরেও বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এতে করে সীমাহীন কষ্টের মুখে পড়েছেন প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ। বিশেষ করে নিম্মমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মানুষেরা না পারছেন সইতে, না পারছেন কইতে।

এদিকে বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষিরা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকি প্রতি মুঠো ২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, সাধারণ শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আর বিচিওয়ালা লাল শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাল আলু প্রতি কেজি ৭০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ব্রুকলি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে এসে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখন এতো দামে সবজি বিক্রি হওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বাজারে সাংঘাতিকভাবে সিন্ডিকেট কাজ করছে। যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে এ পরিস্থিতি।

বিক্রেতা সবজির দাম বাড়ার পেছনে কুয়াশাকে দায়ী করে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেশি কুয়াশা পড়ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে না। সে কারণে ঢাকায় তুলনামূলক পণ্য কম আসছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকের অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবও পড়েছে বাজারে।

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবে কমে যায় গরুর মাংসের দাম। সেই সময় দাম কমে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয় ৬০০ টাকায়। পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে, বাজারে সরকারের এ নির্দেশনা মানার কোনো বালাই নেই। বর্তমানে দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়।

সেইসঙ্গে, ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কক ও লেয়ার ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, গত কিছু দিন ধরেই বাড়তি যাচ্ছে সব ধরনের মাছের দাম। আজকের বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ছোট টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও শোল মাছ প্রতি কেজি ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন