আনসার বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি সেক্টরে চাকরি দেওয়ার নাম করে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র প্রতারণা করে আসছিল। অবশেষে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেই চক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৪ এর মিডিয়া কর্মকর্তা এএসপি কে এন নিয়তি রায়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন— সোহেল রানা ওরফে মিলন (৩৩), তৈয়ব ওরফে মোস্তাক (৪৬), সজীব মুন্সি (৪৪), শামীম আহমেদ (৪৫), মওলাদ আলী খান (৫২) এবং সোহেল রানা ওরফে জিন্নাহ (৩৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেট কার, ৭টি মোবাইল ফোন, দুটি ভুয়া নিয়োগপত্র এবং নগদ ৯৫ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। তাদের গ্রেফতারের সময় একজন ভুক্তভোগীকেও উদ্ধার করা হয়। যাকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে আনা হয়েছিল। সোমবার রাতে তাদেরকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, গত কয়েক দিন আগে সোহেল রানা নামে একজন আমাদের কাছে একটি অভিযোগ নিয়ে আসেন। তিনি জানান তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার আপন ছোট ভাই ১৪ সেপ্টেম্বর সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষা দিচ্ছিল। কিন্তু প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে। এসময় অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে জানায় তার ভাইয়ের কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। ভুক্তভোগী তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে মেজর সোহেল পরিচয় দেন এবং তার সঙ্গে পরে দেখা করতে বলেন। পরে ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানায় অবস্থিত একটি হোটেলে সোহেল রানার সঙ্গে দেখা করেন তার ভাই। প্রতারক সোহেল রানা নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেন এবং তার সঙ্গে থাকা অপর প্রতারক তৈয়বুর রহমানকে সেনাবাহিনীর কর্নেল বলে পরিচয় করিয়ে দেন। সোহেল ভুক্তভোগীর ভাইকে আনসার ব্যাটালিয়ন সিপাহি পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জানায়, তার সাথে আনসারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ আছে এবং ১২ লাখ টাকা দিলে তার ছোট ভাইকে চাকরিতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারবে। এই প্রস্তাবে ভুক্তভোগী রাজি হয় এবং সেই মোতাবেক গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি একটি প্রাইভেট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চার লাখ টাকা দেন। টাকা পাওয়ার পর মেজর পরিচয় দানকারী সোহেল, কর্নেল পরিচয় দানকারী তৈয়বুর রহমানসহ অন্যান্যরা ভুক্তভোগীকে তার ভাই রাজু (১৯) এর আনসার ব্যাটালিয়নে যোগদানের নিয়োগপত্র দেন। নিয়োগপত্রটি দেওয়ার পর বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরও এক লাখ টাকা নেন। নিয়েগপত্রটি পেয়ে ভুক্তভোগী তার ভাইকে নিয়ে বাড়ি আসে। বাড়িতে এসে তারা তাদের গ্রামের আনসারের সিপাহি পদে নিয়োগপত্র প্রাপ্ত হয়েছে এমন একটি ছেলের নিয়োগপত্রের সঙ্গে তাদের নিয়োগপত্রটির অনেক গরমিল দেখতে পায়। পরে ভুক্তোভোগী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন প্রতারক সোহেলের দেওয়া নিয়োগপত্রটি ভুয়া। এ বিষয়ে তারা শাহ আলী থানায় পরে একটি অভিযোগ করেন।
র্যাব জানায়, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগরীতে অবস্থান করে বিভিন্ন জেলার চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উৎকোচের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিল।
তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। ইতোপূর্বে একই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার কারণে র্যাব-৪ কর্তৃক দুইবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।