সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫

বর্ষা-মাহিরের প্রেমের বলি জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ

বর্ষা-মাহিরের প্রেমের বলি জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনের খুনের ঘটনার জেরে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা জানিয়েছেন, বর্ষা ও তার বয়ফ্রেন্ড মাহির রহমানের প্রেমের জেরে খুন হয়েছে জুবায়েদ হোসাইন। তবে জুবায়েদের এই খুনের বিষয়ে ছাত্রী বর্ষা কিছু জানতেন না বলে জানিয়েছেন পুলিশকে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বর্ষাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এসব তথ্য জানান।


তিনি বলেন, ছাত্রী বর্ষার সাথে মাহির রহমানের ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাহির রহমান বুরহান উদ্দীন কলেজে ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। আর বর্ষা পড়তো ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে। পাশাপাশি বাড়িতে তাদের বেড়ে উঠা ছোট থেকে। তাদের মধ্যে ছিলো দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্ক। চতুর্থ শ্রেণি থেকে একে অপরকে পছন্দ করতো। কিন্তু সম্প্রতি তাদের সম্পর্কে টানা পোড়ান ঘটে। কিছুদিন আগে তাদের সম্পর্কের ভাঙন হয়। এবং বর্ষা তার বয়ফ্রেন্ড মাহির রহমানকে জানায় তিনি জুবায়েদকে পছন্দ করে। এটা জানার পর রাগে ক্ষোভে জোবাইদাকে মাহির রহমান ও তার বন্ধুকে নিয়ে হত্যা করেছে।

ওসি বলেন, সম্প্রতি বর্ষা মাহিরকে জানায় যে সে জুবায়েদকে পছন্দ করে। কিন্তু জুবায়েদকে সে তার পছন্দের কথা এখনও জানায়নি। জুবায়েদের সাথে বর্ষার কোন প্রেমের সম্পর্ক নেই। তাদের মধ্যে এধনের কোন মেসেজও পাওয়া যায়নি।কিন্তু বর্ষার কথার উপর ভিত্তি করে রাগে ক্ষোভে বর্ষার বয়ফ্রেন্ড তার বন্ধুকে সাথে করে জুবায়েদকে খুন করে।

এসময় ওসিকে জোবাইদার বন্ধুর সাথে ছাত্রী বর্ষার পরিচয় কিভাবে এটা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে, বর্ষার সাথে জুবায়েদের বন্ধু সৈকতের পরিচয় হয় ফেসবুকে। এছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে তাদের কথা হতো না। বা অন্য কোন সম্পর্কও ছিলো না। যেহেতু সৈকত জুবায়েদের বন্ধু ছিলো এজন্য জুবায়েদের মৃত্যুর খবর দিয়ে সৈকতকে মেসেজ করে বর্ষা।

ওসি বলেন, বর্ষার মধ্যে কোন হতাশা বা কান্নার কোন ছাপ পাওয়া যায়নি। তার মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে কোন নার্ভাসনেসও পাওয়া যায়নি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ষাকে চিন্তামুক্ত দেখা গেছে। আমরা আরো বিস্তর তদন্ত করবো। পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত জানানো হবে আনুষ্ঠানিকভাবে।


জুবায়েদ হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯- ২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই সাথে তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণের সভাপতি ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন। গত এক বছর ধরে জুবায়েদ হোসাইন পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় ১৫, নুরবক্স লেনে রৌশান ভিলা নামের বাসায় ওই ছাত্রীকে ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রী ও বায়োলজি পড়াতেন। ওই ছাত্রী বর্ষার বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন। রোববার আনুমানিক বিকাল ৪ টার ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তিন তলায় তিনি খুন হন। বাসার নিচ তলার সিড়ি থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিড়িতে রক্ত পড়েছিলো। তিন তলার সিড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখে। রোববার রাত ১১ টার দিকে ওই ছাত্রী বর্ষাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয়। এদিন রাত ১১টার সময় আরমানিটোলার নূরবক্স রোড়ের নিজ বাসা থেকে তাকে পুলিশ প্রটোকলে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। এর আগে রাত ১০ টা ৫০ এর সময় খুনের শিকার জোবাইদ হোসাইনের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে নেয় পুলিশ।


সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ