জেন-জি বিক্ষোভে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে। বিক্ষোভের জেরে রাজধানী লিমা ও আশপাশের এলাকায় ৩০ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হোসে জেরি। টেলিভিশনে দেওয়া এক জরুরি ভাষণে তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি এখন শুধু কথা দিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, বরং কঠোর বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণায় রাস্তায় সেনাবাহিনী নামানোর পাশাপাশি নাগরিকদের সমাবেশ, বিক্ষোভ ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জেরি ঘোষণা করেন, এখন থেকে রাষ্ট্র ‘প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান থেকে আক্রমণাত্মক নীতি’ গ্রহণ করবে, অর্থাৎ অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু হবে।
জরুরি অবস্থার অধীনে সরকার সেনাবাহিনীকে রাস্তায় টহল দেওয়ার অনুমতি দেবে এবং নাগরিকদের সমাবেশসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করবে।
ছয়দিন ধরে অনিশ্চয়তার পর অবশেষে পেরুর অন্তর্বর্তী সরকার এই পদক্ষেপ নিল। তবে সরকারি ঘোষণায় কোথাও উল্লেখ করা হয়নি কীভাবে দেশজুড়ে বেড়ে যাওয়া চাঁদাবাজি ও চোরাচালান দমনে প্রয়োজনীয় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর পেরুতে প্রায় ১৮ হাজার চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এর সঙ্গে বেড়েছে হত্যাকাণ্ডও। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৬৯০টি হত্যার ঘটনা রেকর্ড করেছে পুলিশ, যেখানে ২০২৪ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫০২।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরুরি অবস্থা কার্যকর থাকলে মানুষ আর বিক্ষোভ করার সাংবিধানিক অধিকার পাবে না।
গত ১০ অক্টোবর পেরুর কংগ্রেস দুর্নীতি ও অপরাধ দমনে ব্যর্থতার অভিযোগে সাবেক প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তেকে অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণ করে। এরপরই সংসদের স্পিকার হোসে জেরি অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি আগামী জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
পেরুতে দেশজুড়ে দুর্নীতি ও সংগঠিত অপরাধবিরোধী আন্দোলনে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণ প্রজন্মের জেন জি সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার জেরির পদত্যাগ দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে একজন নিহত হন এবং প্রায় ১০০ জন আহত হন।
তবে প্রেসিডেন্ট জেরি জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না।
এর আগে মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট বোলুয়ার্তেও খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী পল ফ্লোরেস খুনের পর ৩০ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। তবে সে সময়ও অপরাধ কমেনি। সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স।