ফিলিস্তিনের গাজায় অপহৃত জিম্মিদের মৃতদেহ অনুসন্ধানের জন্য মিসর ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)-এর দলগুলোকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রোববার ইসরায়েলি সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিসর ও রেড ক্রসের দলকে গাজার ‘ইয়েলো লাইন’ বা ইসরায়েলি সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরেও অনুসন্ধানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
একইদিনে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, মরদেহ উদ্ধারে সহায়তার জন্য হামাসকেও রেড ক্রসের সঙ্গে যৌথভাবে ওই এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে হামাস এখন পর্যন্ত ২৮ জন নিহত ইসরায়েলি জিম্মির মধ্যে ১৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, সব মরদেহ ফেরত দিতে হবে হামাসকে। এখন বিষয়টি তারা মিসরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালনা করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, হামাস যেন দ্রুত মরদেহগুলো ফেরত দেয়, নতুবা শান্তি প্রক্রিয়ায় জড়িত অন্যান্য দেশ ব্যবস্থা নেবে।
ইসরায়েলি এক মুখপাত্র জানান, ইয়েলো লাইনের বাইরে পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় মিসরীয় দল ও রেড ক্রস যৌথভাবে খননযন্ত্র ও ট্রাক ব্যবহার করে মরদেহ উদ্ধারের কাজ চালাবে। এই ‘ইয়েলো লাইন’ হলো গাজার উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব সীমান্ত বরাবর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ সীমারেখা। এটি অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপে নির্ধারিত হয়েছে।
এই খবর জিম্মিদের স্বজনদের জন্য স্বস্তির, যারা মরদেহগুলোকে যথাযথভাবে দাফন করতে মরিয়া।
অবশ্য রেড ক্রস আগেও জিম্মিদের ফেরত আনার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছে। হামাস সরাসরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে জিম্মিদের হস্তান্তর করে না; বরং রেড ক্রসের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হয়। তবে মিসরীয় উদ্ধার দলকে প্রথমবারের মতো গাজার অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলো, যা নতুন দৃষ্টান্ত।
জাতিসংঘের হিসাবে, ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার ৮৪ শতাংশ এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামাস জানায়, বোমা হামলায় ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে মরদেহ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, তবুও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনী কাজ করতে পারবে তা নির্ধারণের পূর্ণ ক্ষমতা ইসরায়েলের হাতে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করি। কোন আন্তর্জাতিক বাহিনী গ্রহণযোগ্য আর কোনটি নয়, তা ইসরায়েলই ঠিক করবে।
এর আগে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, অনেক দেশ গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনীর অংশ হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তবে ইসরায়েলের সম্মতি ছাড়া কাউকেই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
খবরে বলা হয়েছে, এই মন্তব্য মূলত তুরস্কের অংশগ্রহণের বিষয়ে ইসরায়েলের আপত্তির ইঙ্গিতই বহন করছে। তবে হামাসের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া এমন বাহিনী মোতায়েন কতটা বাস্তবসম্মত হবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস-নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৮ হাজার ৫১৯ জন নিহত হয়েছে বলে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ডেস্ক | বাংলাবাজার পত্রিকা.কম

















