রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

বজ্রপাত ও কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মা-ছেলেসহ নিহত ৯

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের গোরস্থান পাড়ায় বজ্রপাতে ঘরে আগুন ধরে যায়

বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা এবং বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা দুইটিই বেড়ে চলছে। গরম বেশি হওয়ায় চলতি বছর বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। রোববার বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একইদিন কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ৪ বছরের শিশু সন্তানসহ এক অন্তঃসত্ত্বা নারী মারা গেছেন। এরমধ্যে খাগড়াছড়িতে বজ্রপাতে ৫ জন, মৌলভীবাজারে এক জন ও টাঙ্গাইলে বজ্রপাতে একজন ও কিশোরগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ চাপায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এরআগে গত বৃহস্পতিবার প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছরে এপর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন বলে জানিয়েছে ডিজাস্টার ফোরাম।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ জন বজ্রপাতে মারা যায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মারা যায় বছরে গড়ে ২০ জনেরও কম। বাংলাদেশে গাছপালা কেটে ফেলা বিশেষ করে খোলা মাঠে উঁচু গাছ ধ্বংস করে ফেলা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে।

আবহাওয়াবিদ এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার তাপ বেশি হওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হবে। আর একই সঙ্গে বর্ষাকালের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি হবে। অন্যদিকে বজ্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং অসচেতনতার কারণে মৃত্যুও বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে একদিনে বজ্রপাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে দুই শিশু। রোববার জেলার তিন উপজেলায় এসব ঘটনা ঘটেছে। জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের গোরস্থান পাড়ায় বজ্রপাতে ঘরে আগুন ধরে যায়। এ সময় ছাদেক মিয়ার স্ত্রী হাসিনা বেগম (৩০) এবং তাঁর ছেলে হানিফ মিয়ার (৮) মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তাদের আরেক ছেলেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন স্থানীয়রা।

অন্যদিকে জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের শশী কারবারি পাড়ার সুছেল বিকাশ ত্রিপুরার স্ত্রী সমিকা ত্রিপুরা (২৬) বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তাদের দুই সন্তান অর্পণ ত্রিপুরা (৩) এবং অহনা ত্রিপুরা (৬) বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়েছে। আহত দুই শিশু মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। একই এলাকায় সমিকা ত্রিপুরা নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে তাদের গৃহপালিত ৩টি ছাগলও মারা গেছে। এ ছাড়াও রামগড় উপজেলায় গনজ মারমা (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। ভোরে বাড়ির উঠানে বাঁধা গরু গোয়াল ঘরে তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। এ সময় তার গরু দুটিও মারা গেছে। তিনি রামগড় উপজেলার ১ নম্বর ইউনিয়নের হাজাছড়া এলাকার কংজ্য মারমার ছেলে। এ ছাড়াও আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে গাছপালা উপড়ে গেছে। বাতাসের তাণ্ডবে পাকা ধান শুয়ে পরেছে। ক্ষতি হয়েছে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি।

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের পদুনাপুর গ্রামে বজ্রপাতে আব্দুল হাই (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল হাই ওই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন কৃষক ছিলেন।

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় বজ্রপাতে এক হোটেল শ্রমিকের প্রাণ গেছে।  উপজেলার ফতেরপাড়া-খিলপাড়া রোড এলাকায় শনিবার রাত ১১টায় এ ঘটনা ঘটে বলে ঘাটাইল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানিয়েছেন। নিহত ৫০ বছর বয়সী ওয়াজেদ আলী খান ওই উপজেলার ঘাটাইল ইউনিয়নের খিলপাড়া এলাকার সোনা খার ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করতেন।

নিহতের পরিবারের বরাতে ঘাটাইল ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রায়হান খান বলেন, শনিবার রাতে হোটেলের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলে ওয়াজেদ আলী। এ সময় আকাশে ঘন ঘন বজ্রপাত হচ্ছিল। এক পর্যায়ে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে ঘরে গাছ পড়ে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে শনিবার রাত ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে করিমগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান।

মৃতরা হলেন-ওই গ্রামের ঘোনারবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী রুপতারা বেগম (৪৫) ও তার ছেলে তাইজুল (৫)।রুপতারা বেগম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে তার স্বামী জানিয়েছেন।

ওসি বলেন, রাতের খাবার খেয়ে নিজেদের দোচালা টিনের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন রুপতারা ও তার ছেলে তাইজুল। রাত ১২ টার দিকে কালবৈশাখী শুরু হলে আব্দুল কাইয়ুমের বাড়িতে গাছ ভেঙে পড়ে।

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোববার দুপুরের পর হবিগঞ্জ পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় হয়। প্রায় আধাঘণ্টা স্থায়ী শিলাবৃষ্টিতে গাছপালা ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন