রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকেরা

শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকেরা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় শীতকালীন সবজির চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চাষে।

উপজেলার বিভিন্ন উচ্চভূমি ও গ্রামাঞ্চলে দেখা গেছে, আলো, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, শিম, বরবটি, লালশাক, মূলাশাক, ঢেঁড়স, করলা, টমেটো, মরিচ, মূলা, বাদাম, ভুট্টা ও তরমুজসহ নানা প্রজাতির সবজি বাগান এখন শোভা ছড়াচ্ছে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে।

ভোরবেলা থেকেই শীতকালীন সবজি চাষাবাদ নিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন কর্মব্যস্ততা দেখা গেছে। কেউ ক্ষেতে সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউবা জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। আগাম মৌসুমি চাষাবাদে ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক কৃষিকাজও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে সবুজ ফসলের খেলায় রঙে রঙে ভরে উঠেছে কৃষিজমি।

ইতোমধ্যে বাজারে আগাম শীতকালীন কিছু সবজিও বিক্রি শুরু হয়েছে। স্থানীয় হাট-বাজারে এসব সবজির চাহিদা বাড়তে থাকায় কৃষকেরা ভালো দামের প্রত্যাশায় আগাম আবাদে আরও মনোযোগী হয়ে উঠছেন।

স্থানীয় কৃষকদের মতে, বর্ষা শেষে কয়েক দফা বন্যার পানিতে জমি ডুবে থাকায়, পানি নেমে গেলে উর্বর পলি জমে জমির উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে যায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৃষকেরা স্বাস্থ্যসম্মত ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যেই মৌসুমের শুরুতেই চাষাবাদ শুরু করেছেন। বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসংখ্যা বাড়ার প্রভাবেও স্থানীয়ভাবে সবজি উৎপাদন বাড়াতে তারা বেশ আগ্রহী। লাউ, কচু, কুমড়া, শিম, বরবটি, পুঁইশাক, লালশাকসহ পুষ্টিগুণ-সমৃদ্ধ নানা সবজি চাষ এখন রীতিমতো প্রতিযোগিতার মতো রূপ নিয়েছে।


কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রবি মৌসুমে বসতবাড়ি ও কৃষিজমিতে সবজি চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলার ৪৫০ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সবজির বীজ বিতরণ করা হয়েছে। গত বছর উপজেলার ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হয়েছে। এবছর তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৭৪৫ হেক্টরে। ইতোমধ্যে আগাম রবি ১৯/২০ জাতের সবজির চাষ সম্পন্ন হয়েছে।

বাদাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলী গ্রামের কৃষক আবু হানিফ জানান, আমি ১০ বিঘায় ভুট্টা, ১০ বিঘায় তরমুজ, ৫ বিঘায় টমেটো, ২ বিঘায় লাউ ও ১ বিঘায় পেয়াজ মরিচ চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ফলন খুব ভালো। লাভের মুখ দেখার আশায় আছি। একই ইউনিয়নের ঢালারপাড় গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, পতিত জমিতে আমি ১২ বিঘায় ভুট্টা ও ৫ বিঘায় তরমুজ চাষ করেছি। যাদুকাটা নদীর চড় ভেসে ওঠায় সেখানে ভুট্টা, রসুন ও পেয়াজের আবাদ করছি।

উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামের কৃষক উসমান মিয়া জানান, আমি ৪ হেক্টর জমিতে গোল আলো চাষ করছি। প্রতি বছরের মতো এবারও ভালো ফলনের আশা করছি। বারহাল গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানিয়েছেন, ৩ হেক্টর জমিতে করলা ও ঢেঁড়সের চাষ করেছি। আগাম ফলন ভালোই পাওয়া যাচ্ছে।


তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণের পাশাপাশি আগাম লাভজনক শীতকালীন সবজি চাষে আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এসব সবজির বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যেই আগাম চাষে ঝুঁকছেন। মাঠে উৎপাদিত অতিরিক্ত সবজি বাজারজাত হওয়ায় ভোক্তারাও ন্যায্য দামে সবজি কিনতে পারছেন।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ