শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

টাকা চুরির জন্য স্ত্রীসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে খুন, দাবি পুলিশের

টাকা চুরির জন্য স্ত্রীসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে খুন, দাবি পুলিশের

টাকা চুরি করতে গিয়েই রংপুরের তারাগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

শুক্রবার দুপুরে তারাগঞ্জের পূর্ব রহিমাপুর হিন্দু পল্লীতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়াল উদ্ধার করতে গিয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন রংপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশচন্দ্র রায় এবং তার স্ত্রী সুবর্ণা রায় হত্যা মামলায় মোরসালিন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শুরুতে জানানো হয়েছিল, গ্রেপ্তার ব্যক্তি কিশোর। তবে পরে জানা গেল, তার বয়স ১৯ বছর।

দুপুরে মোরসালিনকে নিয়েই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়াল উদ্ধার করতে গিয়েছিল পুলিশ। ঘটনাস্থলকে কুড়াল ও একটি দা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, মোরসালিন তারাগঞ্জ কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার মাথায় আট হাজার টাকা ঋণ ছিল। সেই ঋণ কোনোভাবে শোধ করতে পারছিল না। এরই মধ্যে পড়ালেখার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ নেয় সে। ঘটনার কয়েকদিন আগে যোগেশ চন্দ্রের বাড়িতে টাইলস মিস্ত্রির সঙ্গে কাজ করার সময় তার ধারণা হয় এই বাড়িতে অনেক টাকা আছে। সেই ধারণা থেকেই টাকা চুরির জন্য সে ওই বাড়িতে ঢোকে এবং দুজনকে হত্যা করে।


তবে যোগেশ চন্দ্রের ছেলে ও র‌্যাব কর্মকর্তা শোভেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘মাত্র ৮ হাজার টাকার জন্য বাবা-মাকে মেরেছে এটা মনে হচ্ছে না। এটা তো আমরা এখন পর্যন্ত মেনে নিচ্ছিও না।  এর পেছনে আরও লোক আছে বা থাকতে পারে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমিও কিছু বলতে পারব না ।’


মোরসালিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এসপি বলেন, ‘ঘটনার দিন নিজ বাড়িতে থাকা কুড়াল নিয়ে যোগেশচন্দ্র রায়ের বাড়ির পেছনের  আম গাছ দিয়ে দেয়াল টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সে।  প্রথমেই রান্নাঘরের বেসিনে থালাবাসন ধোয়া অবস্থায়  সুবর্ণা রায় কে মাথায় আঘাত করে এবং পরে একই কায়দায় বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়কে হত্যা করে। এরপর যোগেশের  বাড়িতে থাকা একটি দা দিয়ে স্টিলের আলমিরা ভাঙে। কিন্তু সেখানে কোনো টাকা-পয়সা না পেয়ে যে পথে ঢুকেছিল সে পথেই বের হয়ে যায়। সেসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়ালটি পাশের পরিত্যক্ত পুকুরে ফেলে দেয়।’


এসপি জানান, মোরসালিনকে যোগেশ চন্দ্রের বাড়িতে নেওয়া হলে সে নিজেই দা ও কুড়ালের সন্ধান দেয়।


সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, ‘মোরসালিনের বয়স হবে ১৯-২০ বছর। তার কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড আমরা পাইনি। পেশাদার খুনিও সে নয়। শুধু টাকার জন্যই সে একা এত বড় জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। সে মনে করেছে, যেহেতু সৎকার করা হয়েছে মরদেহের তাই আর কেউ টের পাবে না। সে কারণে নিজের বাড়িতেই ছিল সে। আমরা তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দুই-তিন ঘন্টা পর সে বুঝতে পারে যে কেন তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।’


নিহত দম্পতির বড় শেলে শোভেন চন্দ্র বলেন, ‘গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বস্তি পাচ্ছি,কিন্তু এর পেছনে কে বা কারা জড়িত এটার তদন্ত চলছে। যেহেতু আমার সিনিয়র স্যাররা আছেন, তদন্তের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই দেখি শেষ পর্যন্ত কী রেজাল্ট আসে। কারা কারা জড়িত আছে সেটা উদঘাটন হোক। অবশ্যই কেউ না কেউ জড়িত আছে। এটা তদন্ত চলছে চলুক। স্যারদের সঙ্গে কথা বলি তারা আমাকে কী বলে। তারপর বোঝা যাবে।’


জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এই দম্পতি হত্যা করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার কথা বলেন তিনি।


গত রোববার তারাগঞ্জের পূর্ব রহিমাপুরের নিজ বাড়ির ডাইনিং রুম থেকে কুরশা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও রান্নাঘর থেকে তার স্ত্রী সুবর্ণা রায়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।


এ ঘটনায় মামলা কেরেন শোভেন চন্দ্র রায়।


এই দম্পতির আরেক ছেলেও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ