যাদের রক্তের বিনিময়ে দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটেছিল এবং বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল—মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির সেই বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকীতে বীর সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে জাতি।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এরপর সকাল ৬টা ৫৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করে ।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা শহীদ বেদীর সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তারা স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যরা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
ভিআইপিদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পতাকা ও ফুল হাতে মানুষের ঢল নামে স্মৃকিসৌধ প্রাঙ্গণে; ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদী।
বিজয় দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধ ছিল না, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। বিগত পাঁচ দশকের পথচলায় জনগণের পূর্ণ রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি।
“এই প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে নতুন আশা জাগিয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে নতুন সূর্য উদিত হয়েছিল, বিগত বছরগুলোতে তা বারবার স্বৈরাচার আর অপশাসনে ম্লান হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা আবারও একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছি।
“বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি উন্নত ও সুশাসিত বাংলাদেশের শক্তিশালী ভিত গড়ে তুলতে যে বিস্তৃত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, দেশের আপামর জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আজ আমরা সেই কর্মযজ্ঞের সফল পরিসমাপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছি।”
বিজয়ের ৫৪ বছর
বিজয় দিবস উদযাপনের প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা হয়।
পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটাতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতার জন্য যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা সফল পরিণতি পায় নয় মাস পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।
সেদিন ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন যুদ্ধে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী।
তাই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস; বিশ্বের হাতেগোনা যে ক’টি দেশের স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি বিজয় দিবসের মতো উৎসবের উপলক্ষ রয়েছে, তার একটি বাংলাদেশ।
নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাবাজার পত্রিকা.কম



















