বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সাড়ে চুয়াল্লিশ বছর আগে যেখানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে সমাহিত করা হয়েছে, সেই জিয়া উদ্যানে স্বামীর পাশেই শায়িত হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।।
এর আগে বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্র তৈরি হয়।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক খালেদা জিয়ার জানাজা পড়ান।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার আগে উপস্থিত মুসল্লিসহ দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তার ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানাজার আগে তারেক রহমান বলেন, আমার মা মরহুমা বেগম খালেদা জিয়া কারো থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমি সেটি পরিশোধের ব্যবস্থা করব। খালেদা জিয়ার জীবনে কখনো কোনো আচরণে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান তারেক রহমান।
জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ দলের সর্বস্তরের নেতারকর্মীদের পাশাপাশি জামায়াত ইসলামীর শফিকুর রহমান, মিয়া গোলাম পরওয়ার, শামীম সাঈদী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনসিপির নাহিদ ইসলাম ও হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মামুনুল হক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরকে দেখা গেছে। ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের আহমাদুল্লাহও বিএনপি নেত্রীর জানাজায় অংশ নেন।
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন।
এই মানিক মিয়া অ্যাভেনিউতেই ১৯৮১ সালের ২ জুন খালেদা জিয়ার স্বামী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজা হয়েছিল। পরে তাকে সমাহিত করা হয় চন্দ্রিমা উদ্যানে, যার বর্তমান নাম জিয়া উদ্যান।
১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় খালেদা জিয়ার।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান ছিলেন ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের অধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য স্বাধীনতার পর তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। পরে নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে তিনি ক্ষমার শীর্ষে পৌঁছান।
জিয়ার মৃত্যুর পর বিএনপির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া, তখন তিনি নিতান্তই একজন গৃহবধূ। তিনি ১৯৮৪ সালের অগাস্টে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন, আমৃত্যু তিনি সে দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সাতদলীয় জোট গঠন করে এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনে এরশাদ সরকারের সঙ্গে কখনো আপস করেননি খালেদা।
অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতা করলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি কোনো সমঝোতায় যায়নি। তাই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তার নাম হয় আপসহীন নেত্রী।
৪০ দিন ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে মঙ্গলবার ভোর ৬টায় মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তার মৃত্যুতে দেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে, বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।
বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়ার কফিন নেওয়া হয় গুলশানে তার ছেলে তারেক রহমানের বাড়িতে।
পরে জাতীয় পতাকা শোভিত লাশবাহী গাড়ি বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে সংসদ ভবনের সামনে পৌঁছায়। গাড়িবহরে একটি বাসে করে সেখানে পৌঁছান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা। বাদ জোহর খালেদা জিয়ার জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই সংসদ ভবন এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলাবাজার পত্রিকা.কম


















