বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

বিএনপির সমাবেশ গোলাপবাগ মাঠে

বিএনপির সমাবেশ গোলাপবাগ মাঠে

অবশেষে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার দাবি থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে শনিবার দলটিকে ২৬ শর্তে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

ডিএমপির কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এই তথ্য নিশ্চিত করছেন। এদিকে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পরপরই গোলাপবাগ মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যার মধ্যেই মাঠ ভরে যায়। এ সময় তাদেরকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি জানিয়েছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, শনিবারের সমাবেশ থেকে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি জানাবে বিএনপি। এই দাবিগুলো সমাবেশে উপস্থাপন করবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। পাশাপাশি তিনি আগামী দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯টি বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিলেও শুক্রবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে থাকছেন না তিনি। শনিবার বেলা ১২টায় রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠেয় এ সমাবেশের আগে মির্জা ফখরুল মুক্তি না পেলে দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। পাশাপাশি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান সভাপতিত্ব করবেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে শনিবারের সমাবেশ সম্পর্কে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রায় তিন মাস আগে বিএনপি ১০ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করতে নয়াপল্টনের জন্য অনুমতি চেয়ে গত ১৩ নভেম্বর ও ২০ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছিল বিএনপি।

সমাবেশস্থল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত হন। এর পর থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

২৬ শর্তে অনুমতি: শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সমাবেশের জন্য সায়েদাবাদের গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। ডিএমপি কমিশনারের স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. তানভীর সালেহীন ইমন স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্রে দেখা গেছে, সমাবেশের জন্য ২৬টি শর্ত দেয়া হয়েছে বিএনপিকে।

শর্তগুলো হচ্ছে: ১. অনুমতিপ্রাপ্ত স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। ২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ৩. গোলাপবাগ মাঠের ভেতরেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ৪. ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।

৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে উন্নত রেজুলেশনযুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে এবং সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ৭. নিজস্ব ব্যবস্থায় ভেহিক্যাল স্ক্যানারের মাধ্যমে সমাবেশস্থলে আসা সব যানবাহন তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৯. গোলাপবাগ মাঠের বাইরে বা সড়কের পাশে মাইক সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না। ১০. গোলাপবাগ মাঠের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না। ১১. গোলাপবাগ মাঠের বাইরে রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না।

১২. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক ব্যবহার করা যাবে না। ১৩. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনও বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য দেয়া বা প্রচার করা যাবে না। ১৪. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে। ১৫. সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।

১৬. সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনও অবস্থাতেই সমবেত হওয়া, যান ও জন চলাচলে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। ১৭. পতাকা-ব্যানার-ফেস্টুন বহনের আড়ালে কোনও ধরনের লাঠিসোঁটা-রড ব্যবহার করা যাবে না। ১৮. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিকৃত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না। ১৯. রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কার্যকলাপ ও বক্তব্য দেয়া যাবে না। ২০. উসকানিমূলক কোনও বক্তব্য বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। ২১. জনদুর্ভোগ তৈরি করে মিছিল সহকারে সমাবেশ স্থলে আসা যাবে না। ২২. পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। মূল সড়কে কোনও গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। ২৩. সমাবেশস্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।

২৪. স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে সমাবেশ পরিচালনা করতে হবে। ২৫. উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। ২৬. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন