সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

বায়ুদূষণে কমছে আয়ু

সংগৃহিত ছবি

নগরায়নের চাপে পড়ে বাড়ছে বায়ু দুষণ, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে শুরু করেছে মানুষের আয়ু। শুধু বাংলাদেশই নয় বিশ্বের আরও অনেক দেশেই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে বায়ু দূষণ। এরফলে মানুষের গড় আয়ু ২ বছর ৪ মাস কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একজন নাগরিকের গড় আয়ু কমছে ৬ বছর ৮ মাস। এরমানে এখানে বায়ু দূষণের পরিমানের ভয়াবহতা কতো তা বিশ্বের সঙ্গে এখানে আয়ু কমার তারতম্য দেখলেই বোঝা যায়।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং মনুষ্যসৃষ্ট নানাবিধ কারণে বাতাসে ভেসে বেড়ানো অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা এবং দূষণ মানুষের আয়ুষ্কালের জন্যে মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে মানবস্বাস্থ্যের জন্য এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম হুমকি বলে জানিয়েছে কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৩।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর সিসা দূষণের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ১ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। একই কারণে শিশুদের আইকিউ কমে যাচ্ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত বায়ুদূষণ বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৩’-এ এসব তথ্য উঠেছে বলে জানায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মঙ্গলবার আয়োজিত বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজিজেস অব দা চেস্ট অ্যান্ড হসপিটালে ২০২১ সালে আউটডোর এবং জরুরি বিভাগ মিলিয়ে ২ লাখ ১০ হাজার রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৭ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৫ হাজার।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের হিসাবের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে হাসপাতালে ভর্তি, আউটডোর ও জরুরি বিভাগ মিলে রোগীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজারের কিছু বেশি। চলতি বছরের জুলাইয়ে সে সংখ্যা ১৪ হাজার পার হয়েছে।

বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক ও আবহাওয়াজনিত কারণ, নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক কারণ এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্যতম।

গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ থেকে ৩০ শতাংশ, ইটভাটা ও শিল্প-কারখানা থেকে ২৯ শতাংশ, যানবাহন থেকে ১৫ শতাংশ, আন্তদেশীয় বায়ুদূষণ থেকে ৬.৫ শতাংশ, গৃহস্থালি ও রান্নার চুলার কাজ থেকে ৮.৫ শতাংশ এবং বর্জ্য পোড়ানো থেকে ৮ শতাংশ বায়ুদূষণ ঘটে।

দেশের মধ্যে বিভিন্ন জেলার বাতাসের মানের পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গাজীপুর জেলার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা, যার ব্যাস সাধারণত ২.৫ মাইক্রোমিটার বা এর চেয়ে ছোট (পিএম ২.৫), এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৮৯.৮ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। এই মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানমাত্রার (অর্থাৎ ৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে ১৮ গুণ বেশি এবং নির্ধারিত (বার্ষিক) মানমাত্রার চেয়ে ৬ গুণ বেশি। ২০২২ সাল পর্যন্ত অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২.৫-এর জন্য নির্ধারিত (বার্ষিক) প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম দূষিত জেলা হিসেবে পাওয়া গেছে সিলেট শহর। যার প্রতি ঘনমিটাবে ৪৮.৫ মাইক্রোগ্রাম এবং এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে ৯.৭ গুণ বেশি এবং বাংলাদেশের নির্ধারিত জাতীয় আদর্শ (বার্ষিক) মানমাত্রার চেয়ে ৩.২৩ গুণ বেশি।

তিনি জানান, গাজীপুর ছাড়াও নোয়াখালীতে প্রতি ঘনমিটারে ৮৮.৭ মাইক্রোগ্রাম, কুমিল্লায় প্রতি ঘনমিটারে ৮৮.২ মাইক্রোগ্রাম, চাঁদপুরে প্রতি ঘনমিটারে ৮৭.৮ মাইক্রোগ্রাম, ঢাকায় প্রতি ঘনমিটারে ৮৭.২ মাইক্রোগ্রাম, নারায়ণগঞ্জে প্রতি ঘনমিটারে ৮৬.৯ মাইক্রোগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতি ঘনমিটারে ৮৩.১ মাইক্রোগ্রাম, কিশোরগঞ্জে প্রতি ঘনমিটারে ৮২ মাইক্রোগ্রাম এবং টাঙ্গাইলে প্রতি ঘনমিটারে ৮১ মাইক্রোগ্রাম অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি পাওয়া যায়।

সংবাদ সম্মেলনে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, বায়ুদূষণের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ নাগরিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এটা সারা দেশে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করছে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন