ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানের একাধিক স্থানে হামলার পর বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নয়াদিল্লি দাবি করেছে, এসব স্থানে ‘সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ ছিল। তবে সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ। বরং, ভারত মসজিদে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
হামলার জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালিয়েছে এবং কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তান এই হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
হামলা-পাল্টা হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন এবং ভারতশাসিত কাশ্মীরে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এই সংঘাত সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা কী বলছেন, তা নিচে তুলে ধরা হলো:
যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। অনেকদিন ধরেই এই দুই দেশ লড়াই করছে। আশা করি দ্রুত এই পরিস্থিতির অবসান হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ভারত-পাকিস্তানের এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সঙ্গে একমত, এই সংঘর্ষ যেন দ্রুত থামে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয় দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত থাকবো।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, ভারতের এই সামরিক অভিযানে মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি দুই দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান। বিশ্ব আরেকটি ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষ সহ্য করতে পারবে না।
ফ্রান্স
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো: সন্ত্রাসবাদ থেকে আত্মরক্ষায় ভারতের আকাঙ্ক্ষা আমরা বুঝি। তবে আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযত থাকার আহ্বান জানাই, যেন পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এবং সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
জাপান
জাপানের প্রধান মন্ত্রিসভা সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, কাশ্মীরে ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। তবে বর্তমান সংঘর্ষের ধারাবাহিকতা যেন পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাতে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দুই দেশকে সংযত থেকে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাই।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)
আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বলেন, ভারত ও পাকিস্তান যেন উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করে এবং সংঘাত না বাড়ায়। সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে কূটনৈতিক পথই সবচেয়ে কার্যকর।
তুরস্ক
পাকিস্তানে ভারতের হামলার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ভারতের ‘উসকানিমূলক পদক্ষেপ’ ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ দরজা খুলে দিয়েছে। আঙ্কারা সব পক্ষকে বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে, তারা আশা করে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উত্তেজনা কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ইসরায়েল
ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার বলেন, ইসরায়েল ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন জানায়। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করে তারা কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারবে না।
রাশিয়া
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনা বাড়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা উভয় পক্ষকেই সংযত থাকার আহ্বান জানাই। রাশিয়া সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানায়।
চীন
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ভারতের সামরিক পদক্ষেপে চীন দুঃখ প্রকাশ করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, তবে উভয় পক্ষ যেন শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেয়।
কাতার
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকটের সমাধান সম্ভব। উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগ চ্যানেল খোলা রাখা জরুরি।
যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেইনল্ডস বলেন, আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে দেখি। এই দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাজ্য যে কোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
সূত্র: আল-জাজিরা