যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন ও খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে শুধু ভর্তি নয়, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও কারণ
লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলের সম্পত্তি জব্দ: যুক্তরাজ্যের এনসিএর তদন্তে ফ্রিজিং অর্ডার
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) জানান, “হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ স্টুডেন্ট ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের নিয়ম ভাঙায় তাদের সার্টিফিকেশন বাতিল করা হয়েছে। এটি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শক্ত বার্তা।”
এই পদক্ষেপের ফলে এখন থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের নতুন করে ভর্তি করতে পারবে না। এমনকি বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরও অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের সুযোগ আর থাকছে না।
দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা
হার্ভার্ড ও ট্রাম্প প্রশাসনের টানাপোড়েন নতুন নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২5 সালের শুরুতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একাধিকবার রাজনৈতিক ও আদর্শিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে আসছেন।
তাঁর দাবি, “যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চরম বামপন্থী, মার্ক্সবাদী ও মার্কিন-বিরোধী আদর্শে প্রভাবিত।” এ প্রেক্ষাপটে প্রশাসন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা তহবিলে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
হার্ভার্ডের প্রতিক্রিয়া
প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, “১৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থী ও পণ্ডিতদের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতিকে সমৃদ্ধ করছি। এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হার্ভার্ডের গবেষণা ও শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
তারা এটিকে ‘বেআইনি’ বলেও অভিহিত করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক
হার্ভার্ডের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬,৭০০ জনের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ। এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
সারাহ ডেভিস, হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে অধ্যয়নরত অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের স্নাতক হওয়ার মাত্র পাঁচ দিন আগে এই ঘোষণা এলো। আমরা বুঝতে পারছি না, এখানে থেকে পড়া শেষ করতে পারব কি না, কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ থাকবে কি না।”
লিও গার্ডেন, এক সুইডিশ শিক্ষার্থী বলেন, “হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়ার দিনটি ছিল আমার জীবনের সেরা দিন। এখন স্নাতক হওয়ার এক সপ্তাহ আগে সবকিছু ভেঙে পড়ছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা যেন হোয়াইট হাউস ও হার্ভার্ডের দ্বন্দ্বে বলির পাঁঠা হয়ে গেল।”
আরও প্রতিষ্ঠান নজরদারিতে
হার্ভার্ড ছাড়াও নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের তদন্তের আওতায় এসেছে। প্রশাসনের দাবি, এসব প্রতিষ্ঠান ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ ও ‘বর্ণবৈষম্য’ সহ্য করছে এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ফেডারেল অনুদান জব্দ বা বাতিল করা হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা মন্ত্রণালয় (HHS) ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ৬ কোটি ডলার অনুদান বাতিল করে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গনের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে
বিশ্বজুড়ে উচ্চশিক্ষার অন্যতম গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, একতরফা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা সহযোগিতাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সূত্র: বিবিসি