বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪

আমুকে ইসির তলব, নাছিমকে শোকজ

আমুকে ইসির তলব, নাছিমকে শোকজ

প্রতীক বরাদ্দের আগেই জনসভা করে ভোট চাওয়ার অভিযোগে ঝালকাঠি-২ আসনের নৌকার প্রার্থী আমির হোসেন আমুর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমুকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে কমিশনে সশরীরে এসে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। শনিবার ইসির উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠি আমির হোসেন আমুর ঢাকার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। শনিবারকমিটি ও যুগ্ম জেলা জজ মোছাম্মৎ ইছরাত জাহান নাসরিনের সইয়ে তাকে এ নোটিশ দেয়া হয়।

নোটিশে গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, আপনি ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর শান্তিনগর, শাহজাহানপুর ও আরামবাগের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এসময় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এসব এলাকায় যান। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচনী কার্যালয় পরিদর্শন করেন। তখন বিপুল জনসমাগম ঘটে। আপনি নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান যা নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম হিসেবে গণ্য হয়। ওই সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি কমিটির গোচরীভূত হয়। এরপর এসব সংবাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে অনিয়মের সত্যতা পায় অনুসন্ধান কমিটি।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে ৫৬১ জন প্রার্থী আপিল আবেদন করেছেন। এসব আপিল আবেদন নিয়ে রোববার থেকে শুনানি শুরু করবে কমিশন। শনিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

ইসি সচিব বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন পড়েছে ৫৬১টি। এসব আপিল আবেদনের ওপর আগামীকাল রোববার থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন। শনিবার আপিল আবেদনের শেষদিন মোট ১২৩টি আবেদন জমা পড়েছে। তবে কোন দলের কতটি আবেদন পড়েছে তা পরে জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

আমুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে এক অনুষ্ঠানে আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে তিনি ভোট চেয়েছিলেন। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, তাতে ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিন ঠিক করা হয়েছে। সেদিন থেকেই প্রার্থীরা প্রচার শুরু করতে পারবেন, যা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।

আমুকে ইসিতে তলব করে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৮ ডিসেম্বর ছিল 'ঝালকাঠি জেলা পাকহানার মুক্তি দিবস'। দিবস উদযাপনে সেদিন নলছিটি উপজেলা পরিষদ হলরুমে বেলা ১১টায় এবং ওইদিনই বিকেলে ঝালকাঠি পৌরসভার আরেকটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আমু।

ইসির চিঠিতে বলা হয়, জেলা প্রশাসক, ঝালকাঠি ও রিটার্নিং অফিসার আমুকে জানিয়েছিলেন যে নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। ওই আলোচনা সভায় লোকসমাগম বেশি হলে সেটি জনসভায় পরিণত হতে পারে যা ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮'কে ভঙ্গ করে। এছাড়া নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন না হলেও এ ধরনের জনসমাগম গণমাধ্যমের কাছে বিভান্তি সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু আপনি (আমু) ওই জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছেন এবং আপনার পক্ষে ভোট চেয়েছেন।

এই ঘটনার ছবি এবং ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের কাজ সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর পরিপন্থি। আচরণ বিধিমালার বর্ণিত বিধান লঙ্ঘনের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯১ঙ অনুযায়ী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে।

১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমুকে পাঠানো নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আপনাকে আগে থেকে অবহিত করা সত্ত্বেও ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত তারিখের ৩ সপ্তাহের আগে, নির্বাচনি প্রচারণাসহ আচরণবিধি পরিপন্থী কার্যক্রমের জন্য কেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে ১৫ ডিসেম্বর দুপুর তিনটায় ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে উল্লিখিত বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ বিষয়ে আমুর বক্তব্য জানতে কয়েকবার তার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এবারের নির্বাচনে অনিয়ম রোধে প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য ‘নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনি অপরাধ, আচরণবিধি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিতে অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়াদির অনুসন্ধান করে নির্বাচন কমিশনকে জানাবে এ কমিটি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। নির্বাচনি অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছর দণ্ডের বিধান রয়েছে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন