বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

কার্যত ‌‌‌‌‌'অসহযোগের' ডাক দিল বিএনপি

কার্যত ‌‌‌‌‌'অসহযোগের' ডাক দিল বিএনপি

❏ শ্রমিকদের দোকানপাট বন্ধ করা ❏ বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করা ❏ বিয়ের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করাসহ যার যার অবস্থান থেকে সরকারকে ‘না’ বলার আহবান জানিয়েছে দলটি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বিএনপির মানববন্ধনে জনগণকে সরকারের প্রতি অসহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান চাইছেন, কোনো দোকান খুলবে না, মানুষ বিদেশ ভ্রমণও বন্ধ করে দেবে, এমনকি বিয়ের আয়োজনও সংক্ষিপ্ত পরিসরে হবে। এভাবে সরকারকে প্রতি পদক্ষেপে ‘না’ বলে ‘প্রতিরোধ গড়ে’ তুলতে পারলে সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দলটির মানববন্ধনে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে প্রতি সপ্তাহে একদিন বিরতি দিয়ে টানা হরতাল ও অবরোধের মধ্যে এই প্রথম সপ্তাহে প্রথম কর্মদিবসে অন্য কর্মসূচি দিল বিএনপি। ঢাকাসহ দেশের সব শহরেই একই ধরনের কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী জড়োও হয়েছে।

সেলিমা রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে, মিছিলে মিছিলে সারা বাংলাদেশ মুখর। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি বিএনপিকে সংগঠিত করে নতুন করে দাঁড় করিয়েছেন, তার আহ্বান, আপনারা যে যেখান থেকে পারেন সরকারকে ‘না’ বলুন, ‘না’ বলুন, ‘না’ বলুন।

বিএনপি নেত্রী বলেন, সরকারের কোনো কিছুতে অংশগ্রহণ করবেন না। এমনকি দোকান শ্রমিক যারা আছেন সবাই দোকানপাট বন্ধ করে দিন, আপনাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করে দিন, বিয়ে-সাদীর পার্টিগুলো ছোট করে দিন।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা পরিবারের সঙ্গে থাকতে না পেরে ‘বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের কথা চিন্তা করে আপনারা আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আপনারা দেখবেন অতি শিগগির জনগণ এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাবে। বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে এই মানববন্ধন শুরু হয়, যা এক পর্যায়ে রূপ নেয় জমায়েতে। দুপুর ১২টার আগেই নেতারা বক্তব্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।

জনগণকে রাজপথে নামার ডাক দিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। তারা (ক্ষমতাসীনরা) লাঠিয়াল বাহিনী, হেলমেট বাহিনী তৈরি করে জনগণের ওপর অত্যাচার করছে। এটা বেশি দিন চলবে না। আমি বলব, মনে সাহস রাখুন। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব। মিছিলে মিছিলে সারা বাংলাদেশ ভরে দেব। তবু এই সরকারের নির্বাচন আমরা মানব না, মানব না। গত ২৮ অক্টোবর থেকে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের না পেয়ে স্বজনদের ধরে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সেলিমা রহমান।

তিনি বলেন, বাবাকে না পেলে ছেলেকে নিয়ে যায়, ছেলেকে না পেলে মাকে নিয়ে যায়। শনিবার মানবন্ধন করেছে ‘মায়ের ডাক’। সেখান একজন নারী বলল, তার বিরুদ্ধে দুটি খুনের মামলা দেওয়া হয়েছে। সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই হল দেশের অবস্থা, এই হল মানবাধিকার পরিস্থিতি।

‘মানবাধিকার লঙ্ঘনে’ বাংলাদেশ এখন বিশ্বে প্রথম দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বগ্রাসী ‘দানব’ বাংলাদেশ পরিচালনা করছে।

বরিশালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাঁড়াতে দেয়া হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, তাদের লাঠিপেটা করেছে প্রশাসন। আমরা প্রশাসনকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলতে চাই, ‘আপনারা বিবেক দিয়ে কাজ করুন’।

জামিন পাওয়ার ‘ন্যায্য অধিকার’ থেকে দলীয় নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন সেলিমা। তিনি বলেন, বিচারকরা একজনের নির্দেশে চলছেন। যিনি শাসন করছেন, তিনিই সব নির্দেশ করছেন।

বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টো জয়নুল আবদিন ফারুক, তাসসিনা রুশদীর লুনা, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, রেহানা আখতার রানু, মীর নেওয়াজ আলী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদও বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সামনে, ১২ দলীয় জোট ও গণঅধিকার পরিষদ (নূর) বিজয়নগরে পানির ট্যাংকের সামনে; জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টনে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে; এলডিপি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে।

গণফোরাম ও পিপলস পার্টি হাই কোর্ট এলাকায় কদম ফোয়ারার কাছে; গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে; লেবার পার্টি তোপখানা রোডে মেহরাব প্লাজার সামনে, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, এবি পার্টি বিজয় নগরে কর্মসূচি পালন করে। বিএনপি ও জামায়াতপন্থি পেশাজীবীরাও এদিন মানববন্ধনে দাঁড়ান।

এদিকে এক দফা দাবিতে মঙ্গলবার থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। যা চলবে আগামী বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। রোববার বিকেলে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রিজভী বলেন, চলমান একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১২ ডিসেম্বর ভোর ৬টা থেকে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা এ অবরোধ চলবে। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো এ কর্মসূচি পালন করবে। বরাবরের মতো এবারও গণমাধ্যমের যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স এবং অক্সিজেনবাহী যানবাহন অবরোধের আওতাভুক্ত থাকবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এক দফার দাবি আদায়ে যে কর্মসূচি, শেখ হাসিনা পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার অধীনে নির্বাচন আদায়ের সংগ্রাম চলছে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। এরপর দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা গ্রেপ্তার হন। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলও এ কর্মসূচি পালন করছে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন