বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

❏ চিন্তায় আছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ১০০ প্রার্থী ❏ একাধিক প্রার্থী হওয়ায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা

❏ এরইমধ্যে বিভিন্নস্থানে ঘটছে সহিংসতা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন দলটির ৩ হাজার ৩৬২ জন নেতা। এদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র ২৯৮ জন, ফলে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি ভোটের মাঠে না থাকায় এখন ভোটের লড়াইটা মূলত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই। একপক্ষ নৌকা অন্য পক্ষ স্বতন্ত্র। যদিও জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরীকরাও মাঠে আছে। তবে ওইসব দলের চেয়ে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর মনে। বিশেষ করে দলের মনোনয়ন পাওয়া অন্তত ১০০ প্রার্থী এ নিয়ে বেশ চিন্তিত বলে জানা গেছে।

এদিকে একই দলের একাধিক প্রার্থী হওয়ায় ভোটের মাঠে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশংকাও করছেন অনেকে। এরই মধ্যে বিভিন্নস্থানে দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। অথচ তারা সবাই একই দলের। বৃহস্পতিবার কটূক্তির জেরে কুমিল্লা-১ আসনের (দাউদকান্দি-তিতাস) দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচন ভবনের সামনে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। কথা কাটাকাটির জেরে কুমিল্লা-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এবং ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার নাঈম হাসানের সমর্থকরা বৃহস্পতিবার দুপুরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। দেশের অন্যান্য স্থানেও একই চিত্র।

যদিও আওয়ামী লীগ মনে করছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার কৌশল হিসেবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শেষ বিচারে সেটি 'একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন' অনুষ্ঠানে তাদেরকে সাহায্য করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বতন্ত্র নির্বাচনের সুযোগ দেয়ায় দলের মনোনয়ন পাওয়া অন্তত ১০০ প্রার্থী ক্ষুব্ধ। গণভবনে এ সিদ্ধান্ত যখন জানানো হয় বর্তমান সংসদের প্রায় সব এমপি নিজেদের মধ্যে আলোচনায় দ্বিমত পোষণ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে।

মনোনয়ন না পাওয়া অনেক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কে আসল জনপ্রিয় নেতা তা প্রমাণের সুযোগ এসেছে তাদের হাতে। যে জরিপে প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করা হয় সেটি ভুল প্রমাণের সুযোগ পাওয়া যাবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগ থেকে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া অন্তত ২০ প্রার্থী মোবাইল ফোনে বলেন, বিধিনিষেধ দিয়ে যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী বন্ধ করা সম্ভব হয় না, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সুযোগ রেখে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। এসব বিভাগের বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন এমন ১৫ নেতা বলেন, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে, তারা সবাই এলাকায় অজনপ্রিয় বলে বিরোধিতা করছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম্ললীর সদস্য ফারুক খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন নির্বাচনে আরও বেশি করে যাতে ভোটাররা আসে প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী, আর যদি অন্য দলের প্রার্থী না থাকেন, তাহলে দলের ডামি প্রার্থী দেয়া হবে যাতে ভোট বেশি হয়।

আওয়ামী লীগের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দলের প্রয়োজনেই কৌশলগত সিদ্ধান্ত। দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা থাকতে পারে কারও কারও।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, মূলত ভোটার উপস্থিতি, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়া এড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখার কৌশল নেয়া হয়েছে। সেজন্য বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়েছে। তারা দাবি করেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে নির্বাচনমুখী দলগুলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেষ্টা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও সরকারকে বেকায়দায় ফেলা, নির্বাচনে অনিশ্চয়তা তৈরি করা। এমন পরিস্থিতি সামলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম্ললীর এক সদস্য বলেন, এবারের নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ ‘ডিজাইন’ রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী জিতে আসুক চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা ভোটে এমপি হয়ে যাওয়ার ঘটনা সরকারে থাকা আওয়ামী লীগকে বেশ বেকায়দায় ফেলেছে। সেবার দেড় শতাধিক এমপি বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম্ললীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। বিদ্রোহী আর স্বতন্ত্র এক জিনিস না। যারা দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন, কিন্তু না পেয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন, তারা হবেন বিদ্রোহী। তাদের বিদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করব। এ ছাড়া অন্য কেউ স্বতন্ত্র দাঁড়ালে স্বাগত জানানো হবে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহ মনে করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। প্রার্থী যত বাড়বে, ভোটার উপস্থিতিও বাড়বে। এর মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন