বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

শরীক দলে অস্বস্তি, সতর্ক আওয়ামী লীগ

শরীক দলে অস্বস্তি, সতর্ক আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আসন ছাড় নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিকদলগুলোর দরকষাকষি চলছে। ক্ষমতাসীন দল শরিকদের জন্য আসন ছাড়ার বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে বৃহস্পতিবার ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর কথায় পরিষ্কার হয়, জোটের শরিকদের সাতটি আসন ছাড়া হচ্ছে। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের আসন ছাড় নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে শরিক দলগুলোতে। শরিক ১৪ দলে মাত্র ৭টি আসনে সমঝোতা হওয়ায় জোটের অনেক দলের প্রধানও এবার ভোটের মাঠে ছাড় পাচ্ছেন না।

এদিকে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) এবার ৪০ থেকে ৫০টি আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চায়। এ লক্ষ্যে দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার জন্য দেনদরবার অব্যাহত রেখেছেন। শুক্রবার বিকেলে দুই পক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও রাত ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায় নি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা গণমাধ্যমকে জানান, তারা একটি নির্দিষ্টসংখ্যক আসনে সমঝোতার কথা ইতিমধ্যে জাপার নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন। 

জোটের অন্যতম শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু শরিকদের জন্য আরও কিছু আসনে ছাড় চেয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুনেন, আরও অনেক শরিক দল আছে। তাদেরকে তো বোঝাতে হবে। কিন্তু যা হওয়ার হয়েছে। এর বাইরে আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

জোটের শরিকদের জন্য সাতটির বেশি আসনে ছাড় দেয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব নয়-সাফ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন শরিক দলের যত নেতা আছেন, তাদের সবার নির্বাচন করার সুযোগ আছে। তারা যার যার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। কারও ব্যাপারে কোনো বাধা নেই।

শরিক দলের ব্যাখ্যায় ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের শরিক দল বলতে জাতীয় পার্টি তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করবে, ১৪ দলে কিছু আসনে নৌকা মার্কা আমরা দেবো। সাতটা নির্বাচনি এলাকায় নৌকা আমরা স্যাক্রিফাইস করতে পারব, সেটি বৃহস্পতিবারই আমরা জানিয়ে দিয়েছি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী তুলে নিতে শরিকদের দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন তো হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, আমরা আমাদের দলীয় প্রার্থী যেখানে আছে, সেখানে স্বতন্ত্রের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে ইলেকশন করবে না, স্বতন্ত্র যদি জিতে জিতবে, আমরা জোর করে কারো বিজয় ছিনিয়ে আনব না।

শরিকরা নিশ্চিত বিজয়ের গ্যারান্টি চায় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কাউকে বিজয়ের গ্যারান্টি দিতে পারব না। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আমারও জেতার গ্যারান্টি নেই। আমার সঙ্গে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী আছে। এখন কেউ যদি জিতে যায়, তাহলে তো আমাকেও হার মানতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা যেটা আছে, সেটা আমরা মেনে নিয়েছি।

জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। এই অ্যালায়েন্সে আসনের ব্যাপারটা গৌণ, মুখ্য হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যাপারটা।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু জানান, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে তিনটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ-ইনু) তিনটি এবং জাতীয় পার্টিকে (জেপি-মঞ্জু) একটি আসন ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

আমির হোসেন আমু জানান, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-৩, মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে সাতক্ষীরা-১ এবং ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহী-২ আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া জাসদের হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়া-২, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে বগুড়া-৪ এবং মোশাররফ হোসেনকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এর বাইরে জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২ আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ সাতটি আসনের মধ্যে শুধু কুষ্টিয়া-২ আসনে আগে থেকেই কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। জোট শরিকদের জন্য এ আসনগুলো ছেড়ে দিতে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে আওয়ামী লীগের যে নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না বলেই জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন