সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার ঘনিষ্ঠ পাঁচজনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২০১৯ ও ২০২০ সালে ৪০ দফায় মোট ৭৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। এসব টাকা নগদ জমা হয় এবং অর্থের উৎস চিহ্নিত হয়নি বলে জানা গেছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে পাওয়া হিসাব বিশ্লেষণ করে এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
যাদের ব্যাংক হিসাবে ঘুষের অর্থ জমা হয়, তারা হলেন আনিসুল হকের ব্যবসায়িক বন্ধু মোহাম্মদ ইকবাল, মা জাহানারা হক, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জেবুন্নেসা বেগম, ভাগিনা এস কে মো. ইফতেখারুল ইসলাম এবং কথিত বান্ধবী তৌফিকা করিম। তাদের ব্যাংক হিসাবগুলোর একমাত্র নমিনি ছিলেন আনিসুল হক নিজে।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী,
মোহাম্মদ ইকবালের হিসাবে ১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা
জাহানারা হকের হিসাবে ২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা
জেবুন্নেসা বেগমের হিসাবে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা
ইফতেখারুল ইসলামের হিসাবে ২৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা
তৌফিকা করিমের হিসাবে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জমা হয়।
এই অর্থগুলো কোনো ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে আসেনি, বরং সরাসরি নগদ জমা হয়েছে। এতে অর্থের উৎস গোপনের উদ্দেশ্য ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে দুদক ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। একই সঙ্গে তার ২৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে, যেখানে ১৪০ কোটি ১৭ লাখ টাকা রয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, তিনি ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
আনিসুল হকের নামে রয়েছে ১৭টি ব্যাংক হিসাব এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে রয়েছে আরও ১০টি হিসাব। এ ছাড়া তিন দফায় ৩৪৯ কোটি টাকার লেনদেনেরও প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
২০২৩ সালের আগস্টে তিনি আত্মগোপনে যান এবং একই বছরের ১৩ আগস্ট তাকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২০ জানুয়ারি তাকে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধেও ৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ৮৮টি ব্যাংক হিসাবে ৩৭৪ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
তৌফিকা করিমের ৩৮টি ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তার বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।