বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

জাতীয় পার্টি ২৬, শরিকরা পেল ৬, আওয়ামী লীগ লড়বে ২৬৩ আসনে

জাতীয় পার্টি ২৬, শরিকরা পেল ৬, আওয়ামী লীগ লড়বে ২৬৩ আসনে

❏ উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ৫ আসন

❏ নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী ১৮৯৬

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টিকে ২৬টি এবং ১৪ দলের শরিকদের ছয়টি আসন ছেড়ে দিয়ে ২৬৩ আসনে ভোট করার সিদ্ধান্ত জানাল আওয়ামী লীগ। দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া রোববার নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে এই সিদ্ধান্ত জানান। রোববারই ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। যেসব আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিচ্ছে, সেসব আসনে নৌকার প্রার্থীদের প্রত্যাহারের কথা নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েও দেয়া হয়েছে।

ইসিতে পাঠানো চিঠিতে জাপার প্রার্থীদের ছাড় দিতে আওয়ামী লীগের ২৫ জনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের জন্য আগেই খালি রেখেছিল আওয়ামী লীগ। সেখানে কোনো প্রার্থীকে আগে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়নি। সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টি ছাড় পেয়েছে ২৬ আসনে। এদিকে বাকি পাঁচটি আসন উন্মুক্ত রেখেছে ক্ষমতাসীনরা।

যে পাঁচটি আসনে উন্মুক্ত রেখেছে আওয়ামী লীগ, সেগুলোতে দ্বৈত্ব নাগরিকত্ব, ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নৌকার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।

যে পাঁচজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে তারা হলেন ঋণ খেলাপি হওয়ায় কক্সবাজার-১ আসনের সালাহউদ্দিন আহমদ, ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে নাসিরুল ইসলাম খান এবং দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশাল-৪ আসনে বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও ফরিদপুর-৩ আসনের প্রার্থী শামীম হক। এসব প্রার্থীদের প্রার্থিতা ইসিতে বাতিল হওয়ায় বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সংসদে বিরোধী দলের আসনে থাকা এ দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে রংপুর-৩ আসনটি ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ আসনটির বর্তমান এমপি রাহাগীর আল মাহি সাদ এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদের ছেলে। আর এরশাদের ভাই জিএম কাদের বর্তমানে লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য।

দলের কোন্দলে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের মত তার ছেলে সাদও শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেননি। জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত মসিউর রহমান রাঙ্গাও রংপুর-১ আসনে দলের মনোনয়ন পাননি। ওই আসনে জাপা এবার প্রার্থী করেছে হোসেন মকবুল শাহরিয়ারকে।       

জিএম কাদেরের মত তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরকেও ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এই এমপি নির্বাচন করবেন ঢাকা-১৮ আসনে, তাকে নৌকার কোনো প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হবে না।

২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে আসছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে জোটের শরিক হিসেবে ছিল জাতীয় পার্টিও। তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর জাতীয় পার্টি জোটে ছিল না। এবারও বিএনপি ভোটে আসেনি, জাতীয় পর্টিকেও জোটে রাখা হয়নি।

এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী ১ হাজার ৮৯৬ জন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩৪৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যমতে সর্বশেষ বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯৬ জন। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

সচিব বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ছিল রোববার। ৬৪টি জেলার রিটার্নিং অফিসার এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর আসনগুলোর রিটার্নিং অফিসার থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী মোট মনোনয়ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭১৬, বাছাইয়ে বাতিল হয়েছিল ৭৩১, আপিল দায়ের করেছিল ৫৬০টি এবং আপিল মঞ্জুর হয়েছিল ২৮৬টি ও আপিল নামঞ্জুর হয়েছিল ২৭৪টি।

অন্যদিকে ২০১৪ সালে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে- এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেসব আসনেই জয় পায় দলটি। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোট করার পর তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে। এবারও ২৬টি আসনেই ছাড় পেয়েছে জাতীয় পার্টি। সব মিলিয়ে ২৮৩টি আসনে লড়াই করবেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা।

আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ১৪ দলের শরিকদের সাতটি আসন ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছিল আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া চিঠিতে ছয়টি আসনে শরিকদের নৌকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

সেই সাতজনের মধ্যে সাতক্ষীরা-১ আসনের বর্তমান এমপি, ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহর নামও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তাকে আর ছাড় দেয়নি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মত কুষ্টিয়া-২ আসনেও আগে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনে দেয়া চিঠিতে সেখানে বর্তমান এমপি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেই নৌকা দেয়া হয়েছে।

ইনু ছাড়া জাসদের আরো দুইজন আওয়ামী লীগের ছাড় পেয়েছেন। তাদের মধ্যে রেজাউল করিম তানসেন বগুড়া-৪, মোশাররফ হোসেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে নৌকা নিয়ে ভোট করবেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গত তিনবার ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। এবার তাকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছে বরিশাল-২ আসনে। তবে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা আগের মতই রাজশাহী-২ আসনে নৌকা নিয়ে ভোট করবেন।

এর বাইরে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দেওয়া হচ্ছে তার পিরোজপুর-২ আসন। তিনি এ আসনে গত দুইবারের এমপি। শরিকদের জায়গা দিতে গিয়ে বগুড়া-৪ আসনে মো. হেলালউদ্দিন কবিরাজ, রাজশাহী-২ আসনে মোহাম্মদ আলী, বরিশাল-২ আসনে তালুকদার মো. ইউনুস, পিরোজপুর-২ আসনে কানাই লাল বিশ্বাস, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার লাইলীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। শরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫টি আসন পেয়েছিল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ পেয়েছিল তিনটি আসন।  এছাড়া বিকল্পধারাকে তিনটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরীকত ফেডারেশনকে দুটি করে, বাংলাদেশ জাসদকে একটি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

এবার জাসদের আসন সমান থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার ফেনী-১ আসনে নৌকা পাননি। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতির আসন বদলানোর পাশাপাশি ছাড় পাওয়া আসনের সংখ্যা কমেছে। বিকল্প ধারা বা তরীকতের ভাগ্যেও এবার নৌকা জোটেনি। এবার ৩০০ আসনের মধ্যে দুটি আসন খালি রেখে ২৯৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাই এবং নির্বাচন কমিশনে আপিলে তাদের পাঁচজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।

এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের আপিলে যশোর-৪, ফরিদপুর-৩ ও, ময়নসিংহ-৯ আসনে বৈধ প্রার্থী হারান নৌকার প্রার্থিতা। আর কক্সবাজার-১ ও বরিশাল-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী বাছাইয়ে বাদ পড়েন, যারা আপিলেও প্রার্থিতা ফেরত পাননি। ৩২টি আসন ছেড়ে দেয়ায় এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা নিয়ে ভোট করবেন মোট ২৬৩ জন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ২৫৮ জন। এবারের নির্বাচনে ৩৭টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী থাকছে না, যদিও প্রায় সব আসনেই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ানো আওয়ামী নেতারা রয়েছেন।

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ১৪ দলের শরিকদের যে ছয়টি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তারাও ভোট করবেন নৌকা প্রতীকে। ফলে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটে থাকছেন মোট ২৬৯ জন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি যে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছে, সেখানে তারা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়েই ভোট করবেন। 

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন