সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চবি ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা, দুই শিক্ষার্থী লাইফ সাপোর্টে

চবি ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা, দুই শিক্ষার্থী লাইফ সাপোর্টে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর আজ সোমবারও ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে।পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, গতকালের সহিংস পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও শিক্ষকদের বাস ও অন্যান্য যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।

সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে শনিবার রাতে, যখন এক ভাড়া বাসার দারোয়ান কর্তৃক এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে রবিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও জোবরা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সহিংসতায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী আহত হন।

আহতদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের মামুন মিয়া বর্তমানে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুজনের মাথায় গুরুতর আঘাত ও রক্তক্ষরণ হওয়ায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। মামুন মিয়ার অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে থাকলেও ইমতিয়াজ আহমেদ এখনও সংকটাপন্ন। এছাড়া আরও ছয়জন শিক্ষার্থী ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামকে গুরুতর অবস্থায় ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া চবি মেডিকেল সেন্টারে প্রায় ১,৫০০ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৫০০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের একটি বড় অংশ ভিসি বাংলোর নিচে অবস্থান নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তাদের দাবি, নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতিতে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশ ক্যাম্পাসে টহল দিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সৃষ্ট সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

চবির সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষ দেশের শিক্ষা অঙ্গনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীদের জীবন-ঝুঁকি ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, যা দ্রুত সমাধান না হলে অচলাবস্থায় পড়তে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ