মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

‘মব সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার সুযোগ নেই’

‘মব সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার সুযোগ নেই’

মব সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ‘ছোট করার’ কোনো সুযোগ নেই বলে সতর্ক করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসে সেনাবাহিনীর এ অবস্থান তুলে ধরেন সামরিক অপারেশন পরিদপ্তরের কর্নেল স্টাফ শফিকুল ইসলাম।

সারাদেশে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরতে বনানীতে স্টাফ রোডের মেসে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সেখানে মব সন্ত্রাসের নানা ঘটনা তুলে ধরে সেনাবাহিনীর বক্তব্য জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, গত এক বছর ধরে ধৈর্যের সঙ্গে এবং পরিশ্রমের সঙ্গে সরকার ও জনগণের জন্য আমরা কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা উন্নতি করা বা রক্ষা করা শুধু সেনাবাহিনীর কাজ নয়। মেজিস্টিসি পাওয়ার দেয়া হয়েছে; আমরা গ্রেপ্তার, আটক ও হস্তান্তর করতে পারি। কোনো সাজা দিতে পারি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব অংশীদারকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এরই মধ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করা শুরু হয়েছে। একত্রে কাজ করলে সামনের দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে আশা করি।

মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি অন্তরের অন্তরস্থল থেকে। এ ধরনের শ্রদ্ধা-সম্মান আগেও যেমন করেছি, এখনও করি, ভবিষ্যতেও করব। কোনো মব বা কোনো কিছু দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার সুযোগ নেই।

মবের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরে এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, যেখানে যখন মব হয়েছে, সেখানে দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে কয়েকটি জায়গায় সোর্স থেকে তথ্য পেতে দেরি হয়েছে। আর যেকোনো ঘটনা ঘটার পর সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যায়, তারপরে সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করা হয়, এর মধ্যেই কিছু হয়ে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় নিতে পারে না।

মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের বাসার সামনে ‘মব’ সৃষ্টির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা যখনই মেসেজ পেয়েছি, সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব প্রাপ্ত সদস্যরা ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

গুম কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সব সহযোগিতা করা হয়েছে বা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে এ কথা জানিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে না বিষয়টি পুরোপুরি গুজব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


সেনা সদরে ব্রিফিংয়ে কর্নেল শফিকুল ইসলাম আরো বলেন, ‘মায়ানমার সীমান্তে জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া বা তাদের বিজিবি বা সেনাবাহিনীর ক্যাম্প সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সেনাবাহিনী।’


তিনি বলেন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কবর থেকে তুলে নুরাল পাগলার মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কাজ করছে।


শফিকুল ইসলাম বলেন, জনসাধারণের জন্য কাজ করার পরও সামাজিকে যোগাযোগ মাধ্যমে যদি আমাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচারণ করা হয় তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে অনেকেই সেনাবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলছেন।


ডাকসু নির্বাচনে সাইবার বুলিং হওয়ার যে অভিযোগ উঠছে, সংবাদ সম্মেলনে সে প্রসঙ্গও আসে।


এ বিষয়ে কর্নেল স্টাফ শফিকুল ইসলাম বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই; আগেও বলেছি। তবে কিছু অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা হয়েছে। এই অপপ্রচারে কেউ কোনো সুবিধা করতে পারেনি।


ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুস্থ পরিবেশে গণতান্ত্রিক চর্চা হবে, এটাই চাওয়া বলে মন্তব্য করেন এ সেনা কর্মকর্তা।


অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "হারানো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৮০ শতাংশ।"


যত দ্রুত সম্ভব বাকি অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।


সংবাদ সম্মেলনের পর অনানুষ্ঠানিকভাবে না বিষয়ে কথা বলেন সামরিক অপারেশন পরিদপ্তরের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনজুর হোসেন।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ