জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঈমানি আচরণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যিনি নিজের জিহ্বাকে ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশের পথ সুগম করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে অঙ্গীকার করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত জিহ্বা এবং দুই পায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব।’ (বুখারি: ৬৪৭৪; তিরমিজি: ২৪০৯)
জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব ও সতর্কতা
আল্লাহ তাআলা মানুষকে জিহ্বা দিয়েছেন মনের ভাব প্রকাশের জন্য, কিন্তু লাগামহীন ব্যবহারের থেকে সতর্ক করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার নিকটে সদা প্রস্তুত একজন প্রহরী রয়েছে।’ (সুরা ক্বাফ: ১৮)
আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘আমার বান্দাদের বলে দাও, তারা যেন এমন কথাই বলে, যা উত্তম। নিশ্চয় শয়তান মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৫৩)
জিহ্বার মাধ্যমে মানুষ সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে, আবার ভুল ব্যবহার করলে ধ্বংসের পথে চলে যেতে পারে। কটুকথা, পরনিন্দা, গালমন্দ, মিথ্যা বলা—এসব গুনাহ জিহ্বার মাধ্যমেই সংঘটিত হয়। আল্লাহ মুমিনদের প্রশংসায় বলেন, ‘তারা অনর্থক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ৩)
সাহাবিদের সতর্কতা
খোলাফায়ে রাশেদিনরা জিহ্বার অসংযত ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক ছিলেন। আসলাম (রা.) বলেন, একদিন হজরত ওমর (রা.) হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর কাছে গেলেন, তখন তিনি স্বীয় জিহ্বা টানছিলেন, হজরত ওমর বললেন, থামুন! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুক! ব্যাপার কী? তখন হজরত আবু বকর (রা.) বললেন, এটাই আমাকে ধ্বংসের স্থানসমূহে অবতীর্ণ করেছে। (মুয়াত্তা মালেক: ১৮২৫)
মুক্তির উপায় সম্পর্কে যা বলেছেন নবীজি
উকবা ইবনে আমের (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি নবীজিকে (স.) জিজ্ঞেস করেন, মুক্তির উপায় কী? রাসুল (স.) বলেন- ‘নিজের জিহ্বা আয়ত্তে রাখবে, নিজের ঘরে পড়ে থাকবে এবং নিজের পাপের জন্য রোদন করবে। (মেশকাত: ৪৮৩৭)
জিহ্বা ব্যবহার করা হবে সত্য ও ন্যায়ের পথে। আল্লাহর জিকির ও দ্বীন ইসলামের কাজে তা কাজে লাগাতে হবে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে- ‘ওই ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করে।’ (সুরা হামিম সাজদাহ: ৩৩)
নীরবতাই বুদ্ধিমত্তা
রাসুল (স.) বলেছেন- ‘যে নীরবতা অবলম্বন করে, সে মুক্তি পায়।’ (তিরমিজি: ২৫০৩) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ (বুখারি: ৬০১৮; মুসলিম: ১৮২)
আবু মুসা (রা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম মুসলিম সেই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যরা নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি: ১১; মুসলিম: ১৭২) রসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন, ‘মানুষ আল্লাহর সন্তোষমূলক কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় পৌঁছাবে। আল্লাহ তা তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত সন্তুষ্টি হিসেবে লিখে দেন।’
অতএব, মুমিনের জন্য ভালো কথাই বলার, মন্দ কথা পরিহার করার এবং নীরবতার পথে চলার গুরুত্ব অপরিসীম। জিহ্বার সংযম বাস্তবায়নেই ইমানের প্রকৃত মান প্রকাশ পায়। আল্লাহ আমাদেরকে জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।