শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

মাছ-মাংসের দাম চড়া, পুষ্টি হারাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত

মাছ-মাংসের দাম চড়া, পুষ্টি হারাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত

দেশের কাঁচবাজারগুলোতে মাছ ও মাংসের দাম লাগামছাড়া বেড়ে চলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভুগছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। দাম বাড়ার কারণে অনেক পরিবার এখন নিয়মিত মাছ-মাংস খাওয়া বাদ দিচ্ছে বা কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের মধ্যে।

 রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির দাম ওঠানামা করলেও এখন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কক ও সোনালী মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। লাল ডিমের ডজন ১৩০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম রাখছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

এছাড়া বাজারে চাষের রুই-কাতল মাছ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, সিলভার কার্প-গ্রাস কার্প ২৮০ থেকে ৩৩০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের কই, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, বাইন, বাইল মাছ ৭০০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


মাছ-মাংসের পাশাপাশি ডিম ও দুধের দামও ঊর্ধ্বমুখী, ফলে বিকল্প প্রোটিনের উৎসও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।


বনশ্রী এলাকায় মাছ কিনতে আসা রুহুল আমিন বলেন, আগে যে দামে জিনিস পত্র কেনা যেত এখন তার চার ভাগের এক ভাগও পাওয়া যায় না। বাজার দর বাড়ে কিন্তু আয়ের জায়গা তো সেভাবে বাড়েনি। মাছ-মাংসের বাজারে গেলে কপালে ঘাম ঝরে।


মেরাদিয়া এলাকায় অপর এক ক্রেতা রাহিমা বেগম জানান, মাছ-মাংসের দাম বেশি। তবে ব্রয়লা মুরগি কিছুটা কম আছে। কিন্তু অনেকে বলেন ব্রয়লার মুরগি না খেতে। কিন্তু কি করবো বলেন বাচ্চার ন্যূনতম পুষ্টিও তো দরকার আছে। আমাদের আয় ইনকাম কম বলে আমরা তাজা মাছ-মাংস খেতে পারি না।



পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত প্রোটিন না খেলে শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সসহ নানা উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং গর্ভবতী নারীদের জটিলতা বাড়ে।


জাতীয় পুষ্টি ইনস্টিটিউটের এক কর্মকর্তা জানান, দাম বাড়ার কারণে অনেক পরিবার সপ্তাহে এক-দু’দিনও মাংস খেতে পারছে না। এই প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে জাতির সার্বিক পুষ্টি অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, বাজারে অযৌক্তিক দাম বাড়ানো ও মজুতদারির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, তবে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে সময় লাগবে।


অন্যদিকে, সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বাজারে গেলে এখন ভয়ে যাই। আগে সপ্তাহে দু’দিন মাংস কিনতাম, এখন মাসে একবারও কষ্ট হয়ে যায়।


বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরকারকে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর জন্য প্রোটিন খাদ্যে সহায়তা বাড়াতে হবে, নইলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পুষ্টিহীনতায় ভুগবে।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ