বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

ফরিদপুর শহরে ছাদ বাগান করে সফল আয়েশা

ফরিদপুর শহরে ছাদ বাগান করে সফল আয়েশা

আয়েশা আশরাফী ফলের বাগান করে বেশ সফলতা পেয়েছেন। তার দুটি ছাদ বাগানে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের ফল গাছ। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা বর্ণিল ফল। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রিও করছেন তিনি। ছাদ বাগান ও গাছের চারা থেকে আয় করে রীতিমতো সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। গ্রাফটিং ও গুটি কলমের মাধ্যমে গাছের চারা অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। কুরিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় চারা পৌঁছে দিচ্ছেন। মানুষকে দিচ্ছেন পরামর্শ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইডেন মহিলা কলেজ থেকে অনার্স পাস করেছেন আয়েশা আশরাফী। ফরিদপুর শহরের গৃহলক্ষ্মীপুর মহল্লায় বেড়ে উঠা আয়েশা ছোটবেলা থেকেই গাছপালার প্রতি বেশ ভালোবাসা। বিশেষ করে ফল বাগানের প্রতি তার ঝোঁক বেশি। ভালোবাসা আর পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা বিবেচনা করে ছাদ বাগানে আগ্রহী হন। ২০১৯ সালে বাড়ির ছাদে সবজি ও ফল চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই বেশ সফলতা পান। এরপর থেকে তিনি ছাদ বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। তার ছাদ বাগানের সফলতা দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন। অনেকেই আসেন পরামর্শ ও সহায়তা নিতে। তিনি নারীদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছেন।



আয়েশা আশরাফীর ১২০০ স্কয়ার ফিটের দুটি ছাদ বাগান ছাড়াও চানমারি এলাকায় আছে নার্সারি। যেখানে কলমের মাধ্যমে ফল গাছের চারা তৈরি করা হয়। সেগুলো সারাদেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। বিশেষ করে বিদেশি আনারের চারা তৈরি করে অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বিদেশি জাতের আনারের চারার দাম প্রতিটি ৫০০ টাকা। কুরিয়ার খরচ ২০০ টাকা। এ ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন চাষি ও বাগান মালিকদের চারা রোপণ ও পরিচর্যার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে অসংখ্য মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের অসংখ্য মানুষ অনলাইনে তার পরামর্শ নিয়ে ফল গাছ রোপণ করেন।


আয়েশা আশরাফীর দুটি ছাদ বাগান ও নার্সারিতে অন্তত ২০০টির মতো বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ শোভা পাচ্ছে। সবই উন্নত জাতের এবং বেশিরভাগই বিদেশি। এর মধ্যে পাকিস্তানি আনার, অস্ট্রেলিয়ান আনার, মেক্সিকান আনার, ভাগুয়া আনার, থাই আনার, ড্রাগন, চায়না থ্রি লেবু, ফিলিপাইন ব্ল্যাক আখ, কদবেল, থাই শরিফা, অরবরই, মিষ্টি জলপাই, মিসরীয় তিন ফল, রেড প্যালেস্টাইন তিন ফল, সৌদি ইয়োলো, দার্জিলিং কমলা, কাশ্মীরি আপেল কুল, থাই জাম্বুরা, থাই সফেদা, থাই মিষ্টি তেঁতুল, থাই বারোমাসি আমড়া অন্যতম।


তার বাগানে ৩ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। বাগানের শ্রমিক প্রান্ত মালো বলেন, ‘আমি পড়ালেখার পাশাপাশি এখানে কাজ করি। এতে আমার পড়ালেখার খরচও হয় আবার নিজেও চলতে পারি।’


আয়েশা আশরাফী বলেন, ‘মাত্র পাঁচটি ফলের গাছ দিয়ে ছাদ বাগানের যাত্রা শুরু। সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকা। প্রথম বছরেই গাছগুলোতে ভালো ফল পাই। তারপর থেকে পুরো ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রোপণ করি। ছাদে এখন প্রায় সব ধরনের ফলের গাছ আছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ফল ও ফলের চারা বাজারে বিক্রি করি।’


তিনি বলেন, ‘এসব ফলের গাছ থেকে গ্রাফটিং ও গুটি কলমের মাধ্যমে চারা করা হয়। কলমের গাছের চারাগুলো অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। কুরিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় চারাগুলো পৌঁছে দিই। বিভিন্ন ধরনের ফল ও গাছের চারা বিক্রি করে গড়ে এক বছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো আয় হয়।’


আয়েশা আরও বলেন, ‘এসব গাছে কিচেন কমপোস্ট ব্যবহার করা হয়। যা নিজেই তৈরি করি। এ ছাড়া গোবর সার, খৈল, পানি, কলার খোসা, ডিমের খোসাসহ বিভিন্ন দ্রব্য ব্যবহার করে অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করি। আমার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল আছে। যার মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অসংখ্য চাষি চারা সংগ্রহ করেন এবং পরামর্শ নিয়ে থাকেন।’


ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দিন দিন তার ছাদ বাগান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ধরনের ছাদ বাগান তৈরিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ