দেশের সব অঞ্চলই বন্ধ রয়েছে নতুন করে বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রান্নাসহ বিভিন্ন কাজে এখন এলপিজি সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করা হয়। গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহারে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে জীবনের ঝুঁকি।
২০২৪ সালে রাজধানীর বেইলি রোড এলাকায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের প্রায় ৪৬ জন মারা গিয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহারে নিরাপত্তা মোটেই হালকা করে দেখার বিষয় না। এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারে সঠিক নিয়ম মেনে না চললে বিপদ হতে পারে।
সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটে মূলত ব্যবহারবিধি না মানা বা অবহেলা করার কারণে। তাই নিয়ম মেনে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা কমানো যাবে।
এলপিজি আসলে কী?
এলপিজি হলো লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস। এলপিজিকে ক্লিন বা গ্রিন ফুয়েল বলেও আখ্যায়িত করা হয়। প্রোপেন ও বিউটেনের সংমিশ্রণে উৎপন্ন এ গ্যাসটি পেট্রোল ও অকটেনের বিকল্প হিসেবে বিশ্বব্যাপী বেশি ব্যবহার করা হয়। যা রান্নার পাশাপাশি যানবাহনের জ্বালানি হিসেবেও বেশ কার্যকর এবং নিরাপদ।
এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে যেসব বিষয়ে সতর্কতা মেনে চলতে হবে-
১. কেনার আগে যাছাই করা
কেনার আগে দেখতে হবে সিলিন্ডারের মেয়াদ আছে কি না। সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখার পর এর সঙ্গে সংযুক্ত ভালভের মেয়াদও দেখতে হবে। সেখানে কোনো ছিদ্র আছে কি না, তাও যাচাই করতে হবে। একটি সিলিন্ডার ব্যবহার সাধারণত ১০ বছর থেকে ১৫ বছর হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার কোন অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না।
২. একাধিক সিলিন্ডার ব্যবহার করা
সাধারণত বাসায় একমুখী বা দ্বিমুখী একটি চুলা ব্যবহার করা হয়। যদি একাধিক চুলা ব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রতিটির জন্য পৃথক সিলিন্ডার ব্যবহার করাই উত্তম।
৩. দরজা-জানালা খোলা রাখা
রান্না শুরু করার আধাঘণ্টা আগে রান্নাঘরের দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে। রান্না শেষে চুলা ও এলপিজি সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
৪. কোনো ডিভাইস না রাখা
সিলিন্ডারের আশপাশে মোবাইল ফোন, ক্যামেরা বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া কোনো ধরনের তাপের উৎস, জলীয় উৎস এবং দাহ্য পদার্থ পাশে রাখা যাবে না।
৫. দূরত্ব বজায় রাখা
চুলা এবং গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে কমপক্ষে ২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা রয়েছে। এতে করে গ্যাস লিক হলেও কোনো একটি জায়গায় আবদ্ধ হয়ে থাকার আশঙ্কা থাকবে না।
৬. সঠিকভাবে রাখা
এলপিজি সিলিন্ডার খাড়াভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। উপুড় বা কাত করে রাখা যাবে না। এমনভাবে রাখতে হবে যেন আশেপাশে কোন কিছুর সঙ্গে ধাক্কা না লাগে।
৭. নিয়মিত পরীক্ষা করা
হোস পাইপটি নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। কোনো লিকেজ হয়েছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কখনোই দিয়াশলাইয়ের কাঠি বা লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পরীক্ষা করা যাবে না। লিকেজ পরিক্ষার জন্য সাবানের ফেনা করতে পারেন। পানিতে সাবান গুলিয়ে ফেনা করে নিতে হবে। ব্রাশ দিয়ে সেই পানি পাইপের গায়ে মাখাতে হবে। কোথাও লিকেজ থাকলে সেখানে বুদবুদ তৈরি হবে। এমন হলে দ্রুত চুলা বন্ধ করে চাপ নিয়ন্ত্রক বন্ধ করতে হবে।
সূত্র: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিস্ফোরক পরিদপ্তর
ডেস্ক | বাংলাবাজার পত্রিকা.কম

























