মার্কিন সাময়িকী “ফোর্বস”-এর তৈরি করা এশিয়ার ৩০ বছরের কম বয়সী উদ্যোক্তা ও সমাজ পরিবর্তনকারীর (চেঞ্জমেকার) ২০২৪ সালের তালিকায় ৯ জন বাংলাদেশি স্থান পেয়েছেন। ২০১১ সাল থেকে ফোর্বস এ তালিকা প্রণয়ন করে আসছে। গেল কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশি তরুণরা ধারাবাহিকভাবে এ তালিকায় স্থান করে নিচ্ছেন। ৩০ বছর বয়সের আগে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষ অবদানের জন্য “থার্টি আন্ডার থার্টি” বা “৩০ অনূর্ধ্ব ৩০” তালিকাটি প্রণয়ন করে আসছে ফোর্বস। সেখানে বাংলাদেশি তরুণরা নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি ও অবদানের জন্য স্থান করে নিচ্ছেন। এবছর ৩০ বছরের কম বয়সী ৯ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে কলা, প্রযুক্তি, মিডিয়া ও ফিনান্স।
এ ৯ বাংলাদেশি হলেন- আনুশা আলমগীর, মেহেদি স্মরণ (হ্যালো টাস্ক), রেদোয়ান আহমেদ, মো. শহিদুল ইসলাম, আব্দুল গাফফার সাদী এবং মো. তুষার (দ্রুত লোন), সুলতান মনি, মুমতাহিনা আনিকা (জাতিক) ও ফাহাদ আহমেদ (উইন্ড অ্যাপ)।
আনুশা আলমগীর: আনুশা আলমগীর কলা ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন। লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব আর্ট থেকে স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। ২০২৩ ভেনিস বিয়েনেলে ১৮তম আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রদর্শনীতে একমাত্র নারী বাংলাদেশী প্রদর্শক হিসেবে অংশ নেন আনুশা আলমগীর। তার “পর্দা” চলচ্চিত্রটি মুসলিমদের পর্দাশীলতার প্রথার ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এটি বেশ আলোচিত হয়।
আনুশা আলমগীর ভাস্কর্য, পেইন্টিং, ফটোগ্রাফিতেও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। থ্রিফ্ট স্টোর “কালার্স ঢাকা”-এর প্রতিষ্ঠাতা এই নারী।
মেহেদি স্মরণ: হ্যালো টাস্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী স্মরণ কনজিউমার টেকনোলজি ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন। তিনি কাজ শুরু করেন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। রোবট ডাকো নামে এর যাত্রা হলেও এখন নাম দেয়া হয়েছে হ্যালো টাস্ক।
প্রথমে অন ডিমান্ড ডেলিভারি দিয়ে শুরু করলেও ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গৃহকর্মী সেবা চালু করে হ্যালো টাস্ক অ্যাপ্লিকেশন। অ্যাপে বাসার লোকেশন দিয়ে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গৃহকর্মী ডাকা যায়। এই সেবা নিতে হলে সার্ভিস চার্জ ঘণ্টা হিসেবে ঘণ্টাপ্রতি ১০০ টাকা খরচ পড়বে। প্রথম ঘণ্টায় বেজ ফি ৫০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়। অনেকে গৃহকর্মী ডেকে নিয়ে পরে কাজ করান না, তাই ৫০ টাকা যাতায়াত হিসেবে একবারই নেওয়া হয়। হ্যালো টাস্ক বিনিয়োগের বাইরে বিশ্বব্যাংক ও অক্সফামের অনুদানও পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে ১ লাখ গৃহকর্মীকে তাদের প্লাটফর্মে অন্তর্ভূক্ত করা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করা।
রেদোয়ান আহমেদ: রেদওয়ান আহমেদ, একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। মিডিয়া, মার্কেটিং এবং বিজ্ঞাপন বিভাগে স্থান পেয়েছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংবাদ এবং পোশাক কারখানার শ্রমিকদের শোষণ নিয়ে অনুসন্ধান।
শহিদুল ইসলাম, আব্দুল গাফফার সাদী ও মো. তুষার: দ্রুতলোন নামের ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম বেশ বড় পরিসরে সেবা নিয়ে এসেছে। যার মধ্যে আছে স্থানীয় এমএসএমই (অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি) প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে আনা।
দ্রুতলোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো- তাদের সেবা গ্রহণ করতে বারবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যার ফলে ব্যবসার জন্য ঋণ নেওয়া আরও সহজ হবে এবং দেশের সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা আরও অবদান রাখতে পারবেন।
সুলতান মনি, মুমতাহিনা আনিকা: ফাইন্যান্স অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন জাতিকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুলতান মনি এবং মুমতাহিনা আনিকা। জাতিক ছোট কোম্পানিগুলোকে অ্যাকাউন্টিং পরিচালনা করতে সাহায্য করার জন্য সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার সমাধান প্রদান করে। কোম্পানিটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রেও সহায়তা করে। গত আগস্টে 'জাতিক' ১৬ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে। ফাহাদ আহমেদ: “উইন্ড ডট অ্যাপ”র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ আহমেদ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ক্যাটাগরিতে ফোর্বসের এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। “উইন্ড ডট অ্যাপ” দ্রুত এবং খুবই কম খরচে ক্রস-বর্ডার রেমিট্যান্স সুবিধা দেয়। স্টার্ট-আপটি ৩৮ লাখ ডলার তহবিল পেয়েছে।