বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ভয়েস-এর মিডিয়া মনিটরিং প্রতিবেদন প্রকাশ

ভয়েস-এর মিডিয়া মনিটরিং প্রতিবেদন প্রকাশ

বেসরকারি অধিকারভিত্তিক সংগঠন ভয়েস একটি নতুন মিডিয়া মনিটরিং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

আজ মঙ্গলবার ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার লালমাটিয়ায় এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ মিলনায়তনে  প্রতিবেদনটির প্রকাশ ও আলোচনা উপলক্ষে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। 


উক্ত প্রতিবেদনে গণমাধ্যমে উঠে আসা অক্টোবর ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বিভিন্ন সহিংস ঘটনা, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর নিপীড়ন এবং উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্যের বিস্তার তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে মোট ২২৫ টি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। 


প্যানেল আলোচনায় বক্তারা ক্রমবর্ধমান মব সন্ত্রাস ও সংঘবদ্ধ সহিংসতা, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য প্রচার, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার সংকুচিত হওয়া, সাংস্কৃতিক মতপ্রকাশের ওপর বিধিনিষেধ, অনলাইন  হয়রানি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি, পাশাপাশি লেখক, কবি ও বাউলদের ওপরে হয়রানি ও হামলা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভয়েস-এর উপ-পরিচালক মুশাররাত মাহেরা। তিনি বলেন, ‘অনলাইনে নারীদের ও লিঙ্গবৈচিত্র্যসম্পন্ন কর্মীদের ওপর হামলা ক্রমেই বাস্তব জীবনে হুমকিতে রূপ নিচ্ছে। পাশাপাশি লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের ঘটনা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সমাজের মূল ধারা থেকে সরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে।   

জেন্ডার এবং গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ আফরোজা সোমা বলেন, “বর্তমানে দেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করেছে যেখানে মত প্রকাশ করাটাই অনেক ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এ ধরনের মনিটরিং রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কোন কোন ভিত্তি ও যুক্তির ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, সেই র‍্যাশনালগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা জরুরি। ভবিষ্যতে এই প্রতিবেদনটি একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যভান্ডার ও গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে বিবেচিত হবে।

নাগরিক উদ্যোগের নাদিরা পারভীন বলেন, রাষ্ট্র পর্যায়ে ফেসবুক, টিকটকসহ প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে লিঙ্গ পরিচয়, শ্রেণি, জাত বা সংস্কৃতির কারণে কোনো গোষ্ঠীকে আঘাত করে এমন ক্ষতিকর কনটেন্ট দ্রুত শনাক্ত ও অপসারণ করা যায়। 

বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মী মঞ্জুর রশীদ বলেন, “ডিজিটালাইজেশন যেমন সম্ভাবনা তৈরি করছে, তেমনি ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কেমন ডিজিটাল পরিবেশ রেখে যাচ্ছি, সে বিষয়ে ভাবা দরকার।”

তিনি সমাজে বিদ্যমান নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ভয়েস- এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, “নারীদের জনপরিসরে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে অনলাইণে লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য ও সহিংসতাকে গুরুতর হুমকি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন এবং তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল সাক্ষরতা ও নাগরিক শিক্ষা বিস্তারে জাতীয় উদ্যোগ জরুরি।”

প্রতিবেদনটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা, টেলিভিশন এবং সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এতে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বহু ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে মতপ্রকাশ, বাকস্বাধীনতা, সমাবেশ ও সংগঠনের মৌলিক অধিকারের অবক্ষয়ের ইঙ্গিত দেয়।


অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী ও শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ