মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভোগান্তি

টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভোগান্তি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে কক্সবাজারে টানা চার দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারসহ দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। বৃষ্টির কারণে যেমন পর্যটকদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটেছে, তেমনি জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল ও রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।

সোমবার (৭ জুলাই) সরেজমিনে পর্যটক ও হোটেল-মোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার পরবর্তী তিন দিনের ছুটিতে লাখো মানুষ ছুটে যান কক্সবাজারে। হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউসসহ পর্যটনকেন্দ্রিক আবাসন ব্যবসা ছিল জমজমাট। অনেক হোটেলের ৯০ শতাংশ কক্ষ আগেভাগেই বুকিং হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আকস্মিক টানা বৃষ্টি ও উত্তাল সমুদ্রের কারণে পর্যটকেরা কক্ষ বুকিং বাতিল করে ফিরতি পথ ধরছেন।

কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, শহরের প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসের অধিকাংশ কক্ষ এখন ফাঁকা। দুপুর থেকেই বড় অংশের পর্যটক শহর ছেড়েছেন।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে জেলার ৯ উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে শহরের বিভিন্ন সড়কে। বিশেষ করে উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় দেখা দিয়েছে মারাত্মক জলাবদ্ধতা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকিও রয়েছে। সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় পানি ঢুকে পড়েছে। শেডগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়ায় হাজারো শরণার্থী বিপাকে পড়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার আহমদ জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, নিচু এলাকায় অবস্থানরত অনেক শেড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ক্যাম্প ইনচার্জদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে উত্তাল সাগরে গোসলে নামা বিপজ্জনক হওয়ায় কক্সবাজার সৈকতের লাইফগার্ড সংস্থা 'সি-সেফ'-এর পক্ষ থেকে লাল নিশানা টানিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। সি-সেফের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত জানান, সৈকতের কিছু স্থানে গুপ্তখাল রয়েছে, যা আরও ঝুঁকিপূর্ণ। নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেক পর্যটক সাগরে নামছেন, যা উদ্বেগজনক।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, “সৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। লাল নিশানা টানিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। পর্যটকেরা যেন কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হন, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।”

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ