রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

১৮০তম দেশ ভ্রমণে বাংলাদেশের নাজমুন নাহার

১৮০তম দেশ ভ্রমণে বাংলাদেশের নাজমুন নাহার

বিশ্বের নানা প্রান্ত ঘুরে বেড়ানো যেন তার নেশা। সেই নেশাই তাকে নিয়ে গেছে ১৮০টি দেশে। তিনি বাংলাদেশের পরিব্রাজক নাজমুন নাহার। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ তিমুর-লেস্তে সফরের মধ্য দিয়ে তিনি স্পর্শ করেছেন ১৮০তম দেশ ভ্রমণের নতুন মাইলফলক।

ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি নিজে।

ফেসবুকে তিনি লিখেন, তিমুর-লেস্তের রাজধানী দিলির সর্বোচ্চ চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছি আমি—লাল-সবুজ পতাকা বুকে জড়িয়ে। আমার ডানদিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ, বামদিকে ইন্দোনেশিয়া, আর সামনে অসীম নীল সাগর। বিকেলের নরম আলো তখন ঢলে পড়ছে পাহাড়ের গায়ে, সূর্য যেন নিভু-নিভু প্রদীপের মতো বিদায় নিচ্ছে। আমি এই অচেনা দেশে প্রথম পদার্পণ স্মরণীয় করে তুলতে খুঁজে নিলাম পর্বতের শীর্ষ—যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিস্টো রেই, শতাধিক সিঁড়ি বেয়ে কঠিন হ্যাইকিং করে তার পর্বত চূড়ায় পৌঁছেছি।

চূড়া থেকে যখন চোখ মেলে তাকালাম, প্রকৃতি যেন আমার হাত ধরে অভিবাদন জানাল। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আঁকাবাঁকা সরু পথ নেমে গেছে সমুদ্রের দিকে, ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে নীলাভ পাথরে, আর বাতাসের দোদুল্যমান ছন্দ যেন গান গেয়ে গেল ক্লান্ত শরীরকে জাগিয়ে তোলার জন্য। পৃথিবীর এই সৌন্দর্য মনে করিয়ে দিল—প্রকৃতি আসলেই মানবজাতির জন্য এক অমূল্য ভাণ্ডার, কিন্তু তাকে পেতে হলে ঘাম, কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়।

পৃথিবীর একেক দেশের বৈচিত্র্য এক এক রকমের মুগ্ধ হওয়ার মতো। লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে আমি যখন দাঁড়ালাম, তখন মনে হলো—আমার ভ্রমণ কেবল ভ্রমণ নয়, একেকটি দেশ আমার কাছে একেকটি যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে জয় মানে স্বপ্নপূরণ। আর এই স্বপ্নপূরণ কখনোই সহজ ছিল না, প্রতিটি পদক্ষেপ এসেছে অগণিত ত্যাগ, কঠিন সংগ্রাম আর দৃঢ় প্রত্যয়ের বিনিময়ে।

কিন্তু তিমুর-লেস্তে আমাকে নতুনভাবে নাড়া দিল—কারণ এদেশের মাটিও স্বাধীনতার জন্য একইভাবে রক্ত আর ঘামের গল্প বলে। বহু শতাব্দীর ঔপনিবেশিক শাসন আর দীর্ঘ ২৪ বছরের ইন্দোনেশিয়ার দখলদারিত্বের পর এদেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পেয়েছে ২০০২ সালের ২০ মে, যখন তারা বিশ্বের নতুনতম স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয়। প্রতিটি ইট, প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি মানুষের হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে সেই ত্যাগ আর সংগ্রামের ইতিহাস।

এই জাতির সাহস আর অবিচলতা আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেল। মনে হলো—আমার নিজের সংগ্রাম আর তাদের সংগ্রাম কোথাও যেন মিলেমিশে একাকার হয়েছে। আমি গর্বিত ১৮ কোটি বাংলাদেশের মানুষের লাল সবুজের পতাকা নিয়ে আমার ১৮০তম দেশে ভ্রমণের মাটিতে দাঁড়িয়ে, এই দেশের মানুষের ইতিহাসের সাথে সংযুক্ত করতে পেরে।

আমিও যুদ্ধ করি স্বপ্ন পূরণের জন্য— সীমানা পেরিয়ে নতুন সীমানায় লাল সবুজের পতাকাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ভ্রমণের প্রতিটি কষ্ট আমার কাছে বিজয়ের হাসি হয়ে ওঠে যখনই এমন অপূর্ব নিসর্গের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমি তার সৌন্দর্যকে দেখি

ভ্রমণ আমার কাছে শুধুই পথচলা নয়, বরং প্রতিটি পদক্ষেপ শেখা, জানা এবং নিজেকে সমৃদ্ধ করা। তিমুর-লেস্তের পাহাড়, সমুদ্র আর ইতিহাস আজ আমার স্বপ্নকে আরো গভীর করেছে। পৃথিবীর প্রতিটি কষ্ট যখন প্রকৃতির বুকে এসে বিজয়ের হাসি হয়ে ওঠে—তখনই আমি অনুভব করি, আমি সত্যিই স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলেছি।

সম্পাদক : অপূর্ব আহমেদ