বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী কবি হেলাল হাফিজ। যাঁর কবিতা প্রেমিকের হৃদয়ে জন্ম দেয় গভীরতম আর্তি, আবার প্রতিবাদী যুবকের কণ্ঠে তুলে দেয় দ্রোহের আগুন। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কিংবা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’-এর মতো কালজয়ী সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালির মন ও মননে এক স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছেন।
আজ দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। নেত্রকোনা শহরে কেটেছে কবির শৈশব, কৈশোর ও প্রথম যৌবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র তিনি।
১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। ৩৪ বছর পর যুগপৎ ঢাকা ও কলকাতা থেকে প্রকাশ হয়েছে ৩৪টি কবিতা নিয়ে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’।
পিতা খোরশেদ আলী তালুকদার ও মাতার কোকিলা বেগম। ১৯৬৫ সালে নেত্রকোনা দত্ত হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতায় যোগদান করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন। তার কবিতা সংকলন ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। ওই গ্রন্থটির ১২টি সংস্করণ প্রকাশিত হলেও এরপর গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার নিঃস্পৃহতা দেখা যায়।
২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তার অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’। এ কবিতার দুটি পংক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ বাংলাদেশের কবিতামোদী ও সাধারণ পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে।
দেরিতে হলেও ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।
এছাড়াও কবিতার জন্য পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির কবি সংবর্ধনা (১৯৮৫), যশোহর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেদদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা প্রভৃতি।
গত বছর ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে মারা যান তিনি।