শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সরু ও চকচকে করতে গিয়ে প্রতিদিন নষ্ট হয় ৬ হাজার টন চাল

সরু ও চকচকে করতে গিয়ে প্রতিদিন নষ্ট হয় ৬ হাজার টন চাল

সরু ও চকচকে করতে গিয়ে দেশে প্রতিদিন গুঁড়া হিসেবে বাদ যাচ্ছে ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল। যা অটোমেটিক মিলগুলোর মোট উৎপাদনের ১০ ভাগ। এ ছাড়াও ভাঙা ও কালো-মাছি দানা বেছে বাদ দেয়া হচ্ছে আরও ১৫ ভাগ চাল। এই বিপুল পরিমাণ চাল মোট উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হলে সমৃদ্ধ হতো দেশের খাদ্যভাণ্ডার। আর এতে দেশে চাল আমদানি করারও প্রয়োজন হতো না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চালকল মালিকদের হিসাবে, দেশে ১ হাজার ২০০-এর মতো অটোমেটিক রাইস মিল আছে। এসব মিলে গড়ে প্রতিদিন ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। আর ৮ হাজারের মতো হাসকিং মিলসহ অন্য উপায়ে আরও ১৫ হাজার মেট্রিক টনের মতো চাল উৎপাদন হয়।

কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, অটোমেটিক রাইস মিলের একেকটি বয়লারে একযোগে ঢেলে দেয়া হয় ৮০০ মণ ধান। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর বের হয়ে আসে সরু-সিল্কি চাল। এই প্রক্রিয়ায় কম্পিউটারাইজড কালার সর্টার মেশিনে বাদ পড়ে যায় ভাঙা ও কালো-মাছি দানা। আর পলিশ করতে গিয়ে প্রতি মণে গড়ে আড়াই কেজি চাল গুঁড়া হয়ে বের হয়। এই হিসাবে অটোমিলে প্রতিদিন ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করতে গিয়ে পলিশ গুঁড়া হিসাবেই বাদ যাচ্ছে ৬ হাজার মেট্রিক টন। বাদ যাওয়া এই পলিশ গুঁড়া মৎস্য, পোল্ট্রি ও গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, এখন ৪০ কেজি ধানে পলিশ হয় ৬ শতাংশ আর ভাঙা দানা, মরা দানা, মাছি দানা খুদে বাদ যায় ১৫ শতাংশ। এ ছাড়াও ১৮ শতাংশ তুষ জ্বালানি হিসেবে বাদ যাচ্ছে। এর অর্থ এক মণ ধানে ৬১ শতাংশ চাল উৎপাদন হয়।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘হাসকিং মিলে ২৫ থেকে ২৬ কেজি চাল পাওয়া যায়। কিন্তু অটো মিলে একই চাল ২৩ থেকে ২৪ কেজি উৎপাদন হচ্ছে। মণে ২ কেজি চাল কমে যাওয়া রাষ্ট্রের একটা বড় ঘাটতি। চালের মধ্যে যে লাল, কালো ও ভাঙা চাল থাকত সেই চালও আগে মানুষ খেত। এখন সেই লাল, কালো ও ভাঙা চাল ডাস্ট হিসেবে বের হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাপক আকারে চালের ঘাটতি হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে ১ কোটি টন চাল উৎপাদন করতে ১০ থেকে ১১ লাখ টন চাল ঘাটতি হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা কেউ ভাবছি না। আমি মনে করি, বিশেষজ্ঞদের এ বিষয়ে গবেষণা করা দরকার।

এ দিকে জনবহুল বাংলাদেশে প্রধান খাদ্য হিসেবে চাল উৎপাদন বাড়ানোর দিকেই গুরুত্ব দেয়ার কথা বলছেন সচেতনরা। পলিশ না করলে প্রতিদিন বাদ যাওয়া বিপুল পরিমাণ চালের গুঁড়া চাল হিসেবেই যুক্ত হতো। আর এতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতো বাংলাদেশ।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম তালুকদার বলেন, ‘পলিশ করতে গিয়ে যে কেবল চালের অপচয় হচ্ছে, তা নয়। চালের ওপরের লাল আবরণ ফেলে দেয়ার কারণে প্রোটিন, ফাইবার ও থিয়ামিন চলে যাচ্ছে। পড়ে থাকছে কেবল কার্বোহাইড্রেট। ফলে চালের পুষ্টিগুণ কমে যাচ্ছে, স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।’

এ দিকে খুচরা চাল বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, পলিশ করা সরু চকচকে চাল ছাড়া কেউ কিনতেই চান না। কুষ্টিয়া মিউনিসিপালিটি বাজারের চাল বিক্রেতা সরোয়ার মোল্লা বলেন, ‘হাসকিং মিলের চাল এখন বিক্রি হয় না। এখনকার লোকজন আধুনিক হয়ে গেছে। পলিশ চকচকে চাল ছাড়া নিতে চান না।’

চাল বিক্রেতা মো. স্বপন বলেন, হাসকিং মিলের চাল যদি লোকজন খেত, তাহলে এক মণ ধানে কমপক্ষে আরও ২ কেজি চাল বৃদ্ধি পেত। ওই চালের দামও কম, চালও ভালো। কিন্তু সাধারণ মানুষ এটা বোঝে না। তাই তারা চকচকে চাল খোঁজেন।

Courtesy: Daink Bangla

সম্পাদক : জোবায়ের আহমেদ নবীন